স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ছয় দেশের ভাইরাসের সঙ্গে মিলেছে চট্টগ্রামের করোনার ধরন!

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিটা জেলার করোনাভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। ১১ জেলার প্রতিটি উপজেলা ও থানায় ঘুরে ঘুরে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে নিজস্ব ল্যাবে তা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেশে নতুন করে পাঁচটি মিউটেশনের সন্ধান পেয়েছে গবেষক দলটি।

পুরো গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ।

এছাড়াও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, মো. আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী শান্তা পাল এবং বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ছাত্র মো. ওমর ফারুক সম্পৃক্ত ছিলেন।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বিভাগের ভাইরাসটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের দারুণ সাদৃশ্য রয়েছে।

প্রত্যেক জেলার ডাটা পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা আছে। যেমন চট্টগ্রাম জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, চেক রিপাবলিক, সৌদি আরব ও তাইওয়ান; নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপান; কুমিল্লা ও চাঁদপুরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপান; ব্রাক্ষণবাড়ীয়াতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব ও ভারত; কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানে যুক্তরাষ্ট্র, সিয়েরালিওন, জার্মানি, ইতালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিক এবং খাগড়াছড়িতে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের নমুনার সাথে সাদৃশ্য বেশি লক্ষ করা গেছে।

এছাড়া দেশে অন্যান্য সিকুয়েন্সের তুলনায় পাঁচটি নতুন মিউটেশন শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে একটি মিউটেশন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ভাইরাসের কয়েকটি মিউটেশনের একটি। তবে এই মিউটেশনে ভাইরাসটি আক্রান্তের সক্ষমতা কতটুকু তা নিয়ে গবেষণা করার দরকার আছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

তবে বিভিন্ন জিনের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মোট ৮৬টি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হলেও অ্যামিনো এসিডে বা মিউটেশনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সবগুলো মিউটেশন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচটি মিউটেশন চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে বিস্তার করেছে।

জানা যায়, গবেষক দল প্রথমে প্রত্যেক উপজেলা-থানা থেকে করোনা পজিটিভ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে তার আরএনএ’র পরিমাণ (কনসেনট্রেশন) ও গুণের (কোয়ালিটি) ওপর ভিওি করে ৪৬টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য নির্বাচন করে। যার মধ্যে ৩৩টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স ৯৯ শতাংশের উপরে উন্মোচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে ১২টি নমুনার জিনের বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (GISAID) ডাটা বেইসে জমা দেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের একটি উদ্দেশ্য ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কাজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন করা এবং এটি সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিকস, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন অত্যাবশ্যক ছিল তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট, কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ধরনের কিটসের সরবরাহ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই বিষয়গুলোর ওপর যথাযথভাবে নজর দিতে গিয়ে আমাদের কাজটি শেষ করতে প্রচুর সময় লেগেছে। যদিও প্রাথমিকভাবে আমরা কাজটি শুরু করেছিলাম গত জুলাই মাসে এবং যা আগস্টের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আমাদের উন্মোচনকৃত জিনের বিন্যাস চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্রতা ও মিউটেশন এর মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেবে যেটি ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আরো সংবাদ