স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বসনিয়ায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বাংলাদেশিসহ অভিবাসন প্রত্যাশীদের!

মাথা গোঁজার ঠাঁই ও আশ্রয়ের ন্যূনতম পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে বসনিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরা। ইউরো নিউজ জানায়, ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ার লিপা অভিবাসী শিবিরটি ২৩ ডিসেম্বর পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এর পর থেকে শিবিরের প্রায় ১০০০ বাসিন্দা মানবেতন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিও রয়েছে।

ইউরো নিউজ জানায়, ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ার লিপা অভিবাসী শিবিরটি কোভিড-১৯ এর জরুরী বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে সেখানে বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না থাকায় ইউরোপের মানবাধিকার কাউন্সিল এটিকে “খুবই নিম্নমানের” হিসেবে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

শিবিরের ১,৪০০ জন সাবেক বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৯০০ জনকে মঙ্গলবার দেশের কেন্দ্রীয় অংশে একটি সাবেক সেনা ব্যারাকে স্থানান্তর করা হয়, কিন্তু এর পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা বাসে করে তাদের অবতরণ এবং বিধ্বস্ত শিবিরে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

আশ্রয়শিবির পুড়ে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশটির সেনাবাহিনী অস্থায়ী তাবু খাটানোর কাজ করলেও জীবন ধারনের জন্য এটি পর্যাপ্ত নয় বলছেন ভুক্তভোগীরা।

সবশেষ ব্রাডিনায় তাদের স্থানান্তর করার কথা থাকলেও স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মুখে তা ভেস্তে যায়। দুই রাত বাসের মধ্যে অপেক্ষা করেও সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারায় আবারো ফিরে আসেন পোড়া আশ্রয় শিবিরে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপের মুখে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য তাবু স্থাপনের কাজ শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। শুক্রবার তাবু খাটানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে আসেন সেনাসদস্যরা। তবে এই তীব্র ঠান্ডার মধ্যে এই আশ্রয়কে নিরাপদ মনে করছেনা আশ্রয় প্রত্যাশিরা।

এক অভিবাসন প্রত্যাশী বলেন, শুধু খাবার আমাদের জন্য যথেষ্ট না। এর বাইরেও আরো অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় থাকে যা এখানে নেই। এখানে কোনো মানবাধিকারই নেই। অভিবাসন প্রত্যাশী আরেকজন জানান, আমরা না খেয়ে থাকবো সমস্যা নেই, আমরা অভুক্ত থেকে অভ্যস্ত। আমরা প্রয়োজনে পানি খেয়ে বাঁচবো। তবে আমাদের সমস্যা হলো আমাদের এখন কন্টেইনারের প্রয়োজন।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) কর্মকর্তা পিটার ভ্যান ডার আউয়েরেট বলেছেন যে ৯০০ অভিবাসীর জন্য এখানে রাতে থাকার জন্য কোন নিরাপদ আশ্রয় নেই।

শেষ কয়েকদিন ধরে জঙ্গলে আগুন জ্বালিয়ে কোনোমতে রাত পার করছেন আটকে পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অভিবাসীদের সংকট সমাধানে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এদিকে শিবির বন্ধ হওয়ার আগেই, শিশুসহ আরো ১ হাজার ৫০০ অভিবাসী নিকটবর্তী অবৈধ স্থাপনা ও এবং জঙ্গলে মাথা গোজার ঠাঁই নিয়েছিল। এ কারণে বসনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এনজিওগুলোর চাপের মুখে রয়েছে যাতে শিবিরের প্রাক্তন বাসিন্দাদের প্রতি মানবিক হয়ে যথাযথ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে।

এই সপ্তাহের শুরুতে, ড্যানিশ রেফিউজি কাউন্সিল এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন সহ আইওএম এবং অন্যান্য সংগঠন সতর্ক করে দিয়েছিল যে ভারী তুষারপাত এবং ঠাণ্ডা তাপমাত্রার কারণে শত শত অভিবাসীর জীবন “ভয়াবহ ঝুঁকিতে” রয়েছে।

আরো সংবাদ