স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

কোভিড-১৯ : পাইলটদের দক্ষতায় ঘাটতি?

করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম এভিয়েশন খাত। এখনও অনেক দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক বিমান চলাচল শুরু হয়নি। দেশি-বিদেশি অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ রেখেছে ফ্লাইট পরিচালনা। ফ্লাইট চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পাইলটদের দক্ষতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। বিমান চালনায় দীর্ঘদিনের বিরতির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি না থাকলেও বাড়বে পাইলটদের প্রশিক্ষণ ব্যয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ-এ চারটি দেশি এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্চে এয়ারলাইন্সগুলোর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বিভিন্ন বিধি-নিষেধের কারণে এখনও অনেক দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না এয়ারলাইন্সগুলো।

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলছেন, ‘করোনার কারণে কিছু দিন ফ্লাইট বন্ধ ছিল। এখন চালু হলেও খুব সীমিত আকারে চলছে। ফলে পাইলটদেরও ফ্লাইং আওয়ার কমছে। কিছুদিন ফ্লাইটে না যাওয়ার কারণে পাইলটরা প্লেন চালানো ভুলবেন না। কিন্তু তার দক্ষতা, পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে।’

৬০ শতাংশ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কমেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের। ৫০ শতাংশ কমেছে অভ্যন্তরীণ রুটে। ফ্লাইট কমার ফলে এয়ারলাইন্সটির পাইলটদের ফ্লাইং আওয়ারও কমছে।

ইউএস বাংলার পাইলট ক্যাপ্টেন জাকারিয়া বলেন, ‘ফ্লাইটে না থাকা গুরুতর কোনও সমস্যা না। সিভিল এভিয়েশনের বিধি-নিষেধ আছে। তিন মাস ফ্লাইটে না থাকলে কী হবে, ছয় মাস-এক বছর ফ্লাইটে না থাকলে কী হবে। সেসব বিষয়ে মেনে পাইলটরা ফের ফ্লাইটে ফিরতে পারবেন।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ফ্লাইটে না থাকলে ফের ফ্লাইটে ফিরতে হলে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে আসতে হয়। অন্যদের যে সময়ের প্রশিক্ষণ, তাদের হয়তো কিছুটা বেশি সময় থাকতে হয় প্রশিক্ষণে। রুট ট্রেনিং করতে হয়। মূল কথা হলো, প্রশিক্ষণ ব্যয় হয়তো একটু বেশি হবে।’

এদিকে তিন মাসের কথা বলে ফ্লাইট বন্ধ করলেও এখন চালু হয়নি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। মার্চে এয়ারলাইন্সটির কর্মীদের বিনাবেতনে ছুটির চিঠি দেওয়া হয়। এয়ারলাইন্সটির পাইলটরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কবে ফ্লাইটে ফিরবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিজেন্টের একাধিক পাইলট বলছেন, আমরা শুধু অপেক্ষা করছি কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হবে। আমরা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বেতন তো পাচ্ছিই না, দক্ষতা ঘাটতির মধ্যে দিয়েও যাচ্ছি। আমাদের ফের ফ্লাইটে ফিরতে হলে সিমুলেটরসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণে ব্যয় বেশি হবে। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো এসব ব্যয় বহন করে না, পাইলটকেই খরচ করতে হয়।

বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট এক্সিডেন্ট ইনভিস্টিগেশন কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘ফ্লাইটে যেতে না পারলে স্বাভাবিকভাবেই পাইলটদের দক্ষতায় প্রভাব পড়বে। পাইলট লাইসেন্সেরও কিছু বিধি-নিষেধ আছে। তিন মাসে মধ্যে কমপক্ষে তিনটি টেক অফ, তিনটি ল্যান্ডিং করতে হবে একজন পাইলটকে। না হলে তাকে আবার সিমুলেটরে যেতে হবে। এজন্য এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে এয়ারলাইন্সগুলো যদি পাইলটদের শিডিউল করে তাহলে আর বিপত্তিতে পড়তে হবে না।’

আরো সংবাদ