স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বিদেশফেরতদের সহায়তা প্রকল্পেও বিদেশ সফরের আবদার

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের বৈদেশিক শিক্ষা সফর বাবদ ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার আবদার করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

তবে পরামর্শক-বৈদেশিক খাতে এই ব্যয়ের প্রয়োজন নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। করোনাকালে বিদেশ ভ্রমণ না করে সেই টাকা বিদেশফেরতদের দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রস্তাবিত প্রকল্পে পরিকল্পনা কমিশন কিছু মতামত তুলে ধরেছে। প্রকল্প নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) পরিকল্পনা কমিশনে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। 

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পে বৈদেশিক শিক্ষা সফর কতজন করবেন, কতদিন করবেন, এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। প্রকল্পের আওতায় বিদেশ সফরের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না, বিধায় তা বাদ দিয়ে এই অর্থ উপকারভোগীদের ক্যাশ ইনসেনটিভ হিসেবে সংযোজন করা যেতে পারে।

পরিকল্পনা কমিশনের জনসংখ্যা পরিকল্পনা ও সমন্বয় উইংয়ের উপপ্রধান মো. হানিফ উদ্দীন  বলেন, প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনে বৈদেশিক শিক্ষা সফর বাবদ ৭ কোটি ১৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বলেছি, করোনাকালে বিদেশ ভ্রমণ বা বৈদেশিক শিক্ষা সফর দরকার নেই। বরং এই টাকা বিদেশফেরত শ্রমকিদের ইনসেনটিভ দেওয়া যেতে পারে। এতে করে তারা অনেক উপকৃত হবেন। প্রকল্পে পরামর্শ খাতে অনেক ব্যয় চাওয়া হয়েছে এটার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করবো। 

প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। অথচ বিদেশফেরতদের পুনর্বাসনেও প্রকল্পের আওতায় ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০ জন ব্যক্তি পরামর্শক এবং ৮টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ ৯৪ কোটি ৫০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি পরামর্শকরা পাবেন ১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পরামর্শক খাতের এই ব্যয় মোট ব্যয়ের ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এত সংখ্যক পরামর্শক এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। এ বিষয়ে সভায় আলোচনা প্রয়োজন। এছাড়া পরামর্শকদের জন্য বাড়ি ভাড়া ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এটার প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। 

এ প্রকল্পের আওতায় টেলিভিশনে ছবি দেখানো বাবদ ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১টি জিপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৩১টি মোটর সাইকেল ক্রয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। মোটরসাইকেল ক্রয়মূল ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। 

‘প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে সহায়ক প্রকল্প’ চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মেয়াদে ৪৩০ কোটি ৫২ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। 

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে বিদেশ থেকে ফেরত আসা কর্মীদের তালিকা তৈরি করা হবে। বাছাই করা কর্মীদের ওরিয়েন্টেশান ও কাউন্সেলিং করে এককালীন ক্যাশ ইনসেনটিভ দেওয়া হবে, যেন বিদেশফেরত শ্রমিকেরা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উপযুক্ত চাকরি অথবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হতে পারেন। তাদের আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঋণ সহায়তা পেতে সহযোগিতা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

প্রকল্পটি ৮টি বিভাগের ৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। বিশ্বের ১৭৮টির অধিক দেশে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ কর্মী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশে কর্মরত কর্মীরা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। 

কোভিড-১৯ এর কারণে বিদেশে কাজ হারিয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফেরত আসা এসব কর্মীরা দেশে আসার পর অধিকাংশই কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা। আর্থিকসহ সমাজে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এসব ফেরত আসা কর্মীদের সমাজে পুনর্বাসনে সহায়তা করার লক্ষ্যেই প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রকল্পের নানা খাতের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। 

আরো সংবাদ