স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

প্রবাসীরা যেন অবহেলিত না হয়

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি হলো রেমিট্যান্স। সোনার বাংলার লাল-সবুজ পতাকাকে সারাবিশ্বের মানুষের মধ্যে তুলে ধরছে আমাদের প্রবাসী যোদ্ধারা।

স্বাধীনতার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আর এ সুসম্পর্কের কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে হাজার হাজার বাঙালি। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা দিন-রাত খেটে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় করে এবং তা তার পরিবারের জন্য দেশে প্রেরণ করে, যা থেকে রেমিট্যান্স অর্জিত হয়। রেমিট্যান্স একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম চাকা। এই চাকা যত দ্রুত ঘুরবে তত বেশি উন্নয়নের চাকাও ঘুরবে। আর এ চাকা যত ধীরে ঘুরবে ততই উন্নয়নও ধীরে হবে, যা কখনও কোনো দেশের জন্য কাম্য নয়। বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কর্মক্ষেত্রের স্বল্পতা। জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থান কম থাকা এবং কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় অধিকাংশ মানুষ বিদেশের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে একসময় অভিশাপ মনে হলেও বর্তমানে সেই অভিশাপের সুর কিছুটা হলেও পাল্টেছে। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে দেশের উন্নতি সুনিশ্চিত। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যধিক হলেও তা ধীরে ধীরে জনসম্পদে রূপান্তরিত হচ্ছে আর বাংলাদেশও ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র ২০১৯ অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে সৌদি আরবে। তার পর আরব আমিরাতে। শুধু সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে প্রায় ১.২ মিলিয়ন। তবে বর্তমানে কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন এসব দেশেও প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশে শুধু কর্মসংস্থানের জন্য নয় বরং পড়াশোনার উদ্দেশ্যেও অনেকে পাড়ি দেয়। তারা পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেদের যুক্ত করে। প্রবাসী আয়ের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম আর ভারত প্রথম। তবে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চতুথ, যা জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৬ মাসে দেশে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স এসেছে ১১ দশমিক ৭০ বিলিয়নের ডলারেরও বেশি, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেষ ৬ মাসে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স ছিল ৮ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরগুলোর তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত প্রথম অবস্থানে থাকলেও অগ্রযাত্রার দিক থেকে ধাপে ধাপে সুন্দরভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর সংখ্যা রয়েছে কুমিল্লা জেলায়। এ জেলায় মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ মানুষ প্রবাসী। তারপর রয়েছে চট্টগ্রাম। এ জেলার ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ প্রবাসী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে ১৭৪টি দেশে প্রবাসী রয়েছে। মোট অবস্থানরত প্রবাসীর তিন-চতুর্থাংশ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে।

চারদিকে করোনার মহামারির ছড়াছড়ি। বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির চাকা ধীরে ধীরে অচলাবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছিল এ মহামারিতে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তার উল্টো দিক পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশে বরং এ মহামারিতে উন্নয়নের চাকা সচল হয়েছে। একমাত্র রেমিট্যান্সের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে। তবে এ প্রবাসীরা আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। অনেক প্রবাসী রয়েছে যারা কর্মক্ষেত্রে অনেক অবহেলিত। অনেকে তাদের মালিকের দ্বারা শোষণের শিকার হন। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন দেশে। যাদের মাধ্যমে দেশ আজ উন্নতির দিকে পা বাড়িয়েছে, তারাই যদি অবহেলিত, শোষিত হয় তাহলে দেশ কখনও উন্নয়ন করতে পারবে না। প্রবাসীরা আমাদের দেশের হিরো। তারা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে বড্ড অবদান রাখছে। তাই এ প্রবাসীদের দিকে সরকারের সুনজর দেওয়া উচিত।

আরো সংবাদ