স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

একটি হারানো মসজিদের লুকানো ঐতিহ্য

সাধারণভাবে বলা হয়, ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির বাংলায় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটে। বাস্তবতা হলো, বখতিয়ার খিলজি বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে বিবেচিত হলেও এই অঞ্চলে ইসলাম এসেছে তিনি বাংলায় আসার অনেক আগে। মূলত সুফিদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের প্রসার ঘটে- এটা যেমন সত্য তেমনি মহানবী (সা.)-এর সরাসরি সঙ্গী সাহাবাদের বাংলায় আগমণ ও ইসলামের প্রচারের কথাও এখন জানা যাচ্ছে। এরই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে অনেকে লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রামে আশির দশকে আবিষ্কৃত একটি মসজিদের ভগ্নাদেশ ও শিলালিপিকে সামনে নিয়ে আসছেন।

জানা যায়, আশির দশকে জঙ্গলে ভরা গ্রামের একটি উঁচু জায়গাকে কৃষি উপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়। খননের সময় এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে পুরানো ইট বের হয়। যে যার মতো ইট নিয়ে চলে যান। আইয়ুব আলী নামের এক গ্রামবাসী তেমনি একটি ইটের ফলক বাড়ি নিয়ে যান। সেটি পরিষ্কার করে তিনি আরবিতে কিছু লেখা দেখতে পান। অভিজ্ঞ লোকদের সহায়তার তিনি সেখানে লেখা দেখতে পান, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ’ লেখা এবং সময় লেখা হিজরি ৬৯ সাল যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৬৪৮ সাল। মসজিদটির নাম তখন থেকেই হয়ে যায় হারানো মসজিদ। শিলালিপিটি রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ির জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

লালমনিরহাটে হারানো মসজিদ নিয়ে অনেকেই গবেষণা করেন। বৃটিশ ইতিহাসপ্রেমী টিম স্টিল মসজিদের এলাকা ঘুরে দেখেন এবং রোমান ও জার্মান ইতিহাসের সূত্র ধরে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজির সঙ্গে যোগাযোগ করে যে তথ্য পান তাতে মসজিদটি সাহাবীদের সময়ে নির্মিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ আর্কিওলজি টিম স্টিলকে জানায়, তাদের বেশ কিছু গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র- তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহার করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

উয়ারী বটেশ্বরে প্রাচীন গঙ্গাঋদ্ধি সভ্যতা আবিষ্কারের পর এটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে ব্রহ্মপুত্র ধরে বিশ্বের নানা দেশের মানুষের মতো আরব নাগরিকরাও নিয়মিত এই অঞ্চলে আসতেন। সাহাবীগণ চট্টগ্রামে আসার পর  ব্রহ্মপুত্র হয়ে পুরানো সিল্ক রুট ধরে চায়না যেতেন বলেই গবেষকরা মনে করছেন। টিম স্টিলের মতে এই মসজিদ বাংলায় ইসলামের ইতিহাসকে বদলে দেবে এবং এটি হবে উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ।

হারানো মসজিদটি যে জমির ওপর অবস্থিত নানা সূত্রে সেটির মালিক হন নবাব আলী। জমিতে প্রাচীন মসজিদ পাওয়ার খবরে তিনি মসজিদের জন্য জমিটি দান করেন। প্রাচীন মসজিদটির জায়গায় গড়ে ওঠে নতুন মসজিদ। এর নাম শুরুতে হারানো মসজিদ থাকলেও পরবর্তীতে সাহাবীর মসজিদ বা সাহাবা কেরাম মসজিদ নামে পরিচিতি পায়।

আরো সংবাদ