স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার উপযুক্ত সময় এখনই : কনস্যাল জেনারেল

প্রবাসীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার এখনই উপযুক্ত সময় বলে উল্লেখ করলেন কনস্যাল জেনারেল মোঃ ইকবাল হোসেন খান।

তিনি গতকাল বুধবার দুবাই পার্ক হায়াৎ হোটেলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত রোডশো অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যহত রেখে ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে হবে।

দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ করতে যাচ্ছে বিএসইসি। কমিশনেরর এই উদ্যোগ এবারই প্রথম।

এদিকে ইক্যুইটি নির্ভরতা কমাতে পুঁজিবাজারে আরও নতুন পণ্য চালু করতে যাচ্ছে কমিশন। বিএসইসি জানিয়েছে, শীঘ্রই তারা নতুন চারটি পণ্য চালু করবে। পণ্যগুলো হচ্ছে- ডেরিভেটিভস, গ্রিন বন্ড, সুকুক ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)।

৯-১২ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ করছে বিএসইসি। ‘রাইজিং অব দ্য বেঙ্গাল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেটস’ শীর্ষক রোডশোতে নতুন পণ্য চালু এবং সম্ভাবনা বিদেশি বিনিয়োগকারী ও এনআরবিদের কাছে তুলে ধরবে কমিশন।

কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিসিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশিদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টই বেশি।

পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সহজে বিনিয়োগের জন্য কমিশন সম্প্রতি ডিজিটাল বুথ খোলার বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলা শুরু হলে এনআরবিসহ বিদেশিরা সহজে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদেশি অর্থপ্রবাহ বাড়বে।

বিদেশে অবস্থানরত নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) পাঠানো রেমিটেন্স বিনিয়োগে রূপান্তর করতে চায় কমিশন, সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার হতে পারে ভালো জায়গা।

কমিশনের এক কর্মকর্তারা বলেন, প্রবাসীরা অর্জিত অর্থ পাঠায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ নতুন বাড়ি বানিয়ে শেষ করে। কিন্তু সেটা বিনিয়োগে রূপান্তর করা গেলে তাদের আয়ের উৎস বাড়বে। কমিশন সে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে।

বিএসইসির চেয়্যারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, “রোড শো আয়োজনের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত করা হবে। পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।”

তিনি বলেন, “নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা অনেকেই পুঁজিবাজারে আসে না। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও সেটা জানে না। এই জন্য তাদেরকে বিনিয়োগ সম্পর্কে উৎসাহিত করা হবে।”

এধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম

প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে উপনীত হলেও বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে টানতে প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসইসি। দেশের বাইরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে বিনেয়াগে উৎসাহিত করার উদ্যোগ আগে নেওয়া হয়নি।

কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোভিডের কারণে বিশ্বে বিনিয়োগের পরিবেশ সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। নন-রেসডেন্ট বাংলাদেশী ও বিদেশীদের বিনিয়োগে সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে বিনিয়োগ করেছে চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ। কৌশলগত অংশীদার হিসাবে পাওয়ার পর ডিএসই চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন করেছে।

সাধারণত কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করতে রোড শো আয়োজন করে। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা, সম্ভাবনা ও নতুন পণ্য সম্পর্কে অবগত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ক্যাপিটাল মার্কেটস রোডশো’ আয়োজন করবে।

কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনসম্মুখে আসার আগে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সে প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত প্রচারনাই রোডশো। কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করার আগে, প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেই রোডশো।

“কোভিডের কারণে সারা পৃথিবীতে বিনিয়োগের পরিবেশ কমে গেছে কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রোডশো আয়োজনের মাধ্যমে বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং বিদেশি ও এনআরবিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।”

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসির চেয়্যারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সিটি ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ হোসেইন, ইসলামির ওরগানাজেশনের প্রধান আলি আহসান, ইউসিবি এর নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিম আলমগীর।

এতে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএসই এর ডাইরেক্টর মুতাকিম আসরাফ, বিএসইসি এর ডিডি লুৎফুর কাবির, আলিয়ান্স ক্যাপিটালের এর সিইও আসাদুল ইসলাম রিপন, আইডিএলসি সিকিউরিটিস এর সিইও সাইফুদ্দিন, এসসিবি বিডি এর হ্যাড অব সিএম মারুফ অর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আজমান চেম্বার এর চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল মুয়াইজি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাহাতাবুর রহমান নাসির সিআইপি সহ আরো অনেকে।

বি

গত

আরো সংবাদ