স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ঢাকায় এলেন নরেন্দ্র মোদি

দুই দিনের সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল দশটা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছান।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসাবে যোগ দিয়েছেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন এবং ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তার এই সফর।

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তিতে মোদির এ সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

বাংলাদেশ সফর নিয়ে উচ্ছ্বাসিত নরেন্দ্র মোদি গত রাতে দুই দফা টুইট বার্তা দিয়েছেন। একটি বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ স্মরণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, এর পাশাপাশি আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের অপেক্ষায় আছি।’

তিনি আরো লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারি আমাদের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ (প্রতিবেশীই প্রথম) নীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আর আমরা একে গভীর ও বৈচিত্র্যময় করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন যাত্রাকে আমরা সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখব।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, গত বছর কভিড মহামারি শুরুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এটিই প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে।

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর পাশাপাশি এ বছরটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয়-প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের জোরালো ভূমিকা, সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল ও রয়েছে।

কভিড মহামারির মধ্যে ভারতের উপহার হিসেবে আজ আসছে আরো ১২ লাখ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে যে সম্পর্ক তা বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই ‘মডেল’। অনেকেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ার স্বপ্ন দেখে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে ভারতীয়রা যুদ্ধ করেছেন, রক্ত দিয়েছেন। এটিও বিশ্বে বিরল।

তিনি আরো জানিয়েছেন, মোদি বাংলাদেশ সফরের অপেক্ষায় আছেন। এই সফর হবে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাইলফলক।

ঢাকায় রওনার আগে টুইট করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে করা টুইটে লেখা হয়, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরকালে বিস্তারিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, যার লক্ষ্য ভারতের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরও এগিয়ে নেওয়া।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতার পর, নরেন্দ্র মোদি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন।

এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যাবেন। বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন হোটেল শেরাটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানমালার দশম দিনের অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে যোগ দেবেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু যাদুঘর’। সেখানে মোদি তার সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় যোগদান করবেন।

দ্বিতীয় দিন শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

এছাড়া তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরিপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী দেবী মন্দির পরিদর্শন এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায় ওরাকান্দি মন্দির পরিদর্শন করবেন।

একইদিন শনিবার বিকেলে মোদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। এসময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি দুইদেশের যৌথভাবে করা বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

আরো সংবাদ