স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ইয়াস: কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বিধ্বস্ত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি

ভরা পূর্ণিমা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পানির উচ্চতা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে উপড়ে পড়েছে গাছপালা, বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেড়িবাঁধ ভেঙে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি। কক্সবাজার শহরের অন্তত তিনটি এলাকায় বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কেও আচড়ে পড়ছে জোয়ারের পানি।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রবল জোয়ারের পানিতে উপড়ে যাচ্ছে গাছপালা। ভাঙন ধরেছে জেটির পল্টুনে ও রাস্তাঘাটে। টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে বেড়িবাঁধের ব্লকে ধ্বস নেমেছে। তবে মানুষের জানমাল রক্ষায় সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, এরইমধ্যে দ্বীপে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন দশকে এত বেশি পানি সেন্টমার্টিনবাসি আর দেখেনি জানিয়ে দ্বীপ রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে যে কোনসময় সেন্টমার্টিন তলিয়ে যাবে বলে শংঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

মাতারবাড়ির ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার মাহমদুল্লাহ্ জানিয়েছেন, জোয়ারের পানিতে মাতারবাড়ির ইউনিয়নের ৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে পানি। ইতোমধ্যে ৫০ থেকে ৮০ টি ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। উপড়ে গেছে গাছপালা। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রাতে জোয়ারের পানির উচ্চতা আবারও বৃদ্ধি পেলে এবং তা লোকালয়ে ঢুকে পড়লে তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।

দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী কায়সার সিকদার জানান, কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং, আলী আকবর ডেইল ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

একইভাবে মহেশখালীর ধলঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি তলিয়েগেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী রকিয়ত উল্লাহ।

টেকনাফ উপজেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তাফা জানান, শাহপরীরদ্বীপে জোয়ারের পানি ও ঝড়ো বাতাসে কিছু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ। সেন্টমার্টিনের অবস্থা ভয়াবহ। তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে রাক্ষুসে সাগর। ভেঙে যাচ্ছে জেটির পন্টুন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ জানিয়েছেন, কক্সবাজার উপকূলের ঝূঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল দু’দিন আগেই। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল আশ্রয়কেন্দ্র এবং স্বেচ্ছাসেবকদের। মানুষের জানমাল রক্ষায় আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর ঝুঁকি থেকে কক্সবাজার মুক্ত বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. আবদুর রহমান। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ৩ নং সতর্ক সংকেত বহাল রয়েছে। সাগরের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর প্রভাবে সাগর এখন খুবই উত্তাল।

আরো সংবাদ