স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

কুয়েতে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের প্রতিশ্রুতি

কুয়েত প্রবাসীদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ দূতাবাস। প্রবাসীদের আকামা জটিলতা, অপরিশোধিত বেতন, পাসপোর্ট সেবা, কন্সুলার সেবা, কর্মক্ষেত্রে কোম্পানি বা স্পন্সরের সঙ্গে সমস্যাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দূতাবাস প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) প্রবাসী সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতকালে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান এসব কথা বলেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের মতো কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসাবাণিজ্য গুটিয়ে রীতিমতো নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। এমনকি দেশে ছুটিতে গিয়ে আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াতে অনেকে কুয়েতের কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি। এছাড়াও বর্তমানে ষাটোর্ধ বয়সী প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের কর্মস্থলে থাকা নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান কুয়েত প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন কুয়েত প্রবাসী সংবাদকর্মীদের সঙ্গে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুন) কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশি সংবাদকর্মীদের পক্ষে আ.হ. জুবেদ, শরিফ মিজান ও মোহাম্মদ হেফজু কুয়েত প্রবাসীদের নানা সমস্যা লিখিত ও মৌখিকভাবে রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।

দীর্ঘদিন ধরে কুয়েতের কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশি আসামিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তাদের কারামুক্ত করে দেশে পাঠানোর জন্য লিখিত একটি আবেদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, যারা আমিরি ক্ষমা পেয়েছিলেন, তাদের অনেককেই দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বাকি যারা দেশে যেতে পারছেন না, তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। স্থানীয় আইনি জটিলতা থাকলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্নেরও আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত।

করোনাভাইরাস, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে প্রবাসীরা মারা গেলে অনেক সময় মৃত প্রবাসীদের স্বজনরা অনেক দেরিতে তাদের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন। এছাড়া প্রায়ই শোনা যায়, মৃত প্রবাসীর লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন সম্পন্ন করা হয়। অথচ এ ব্যাপারে মৃত প্রবাসীর স্বজনরা কয়েক মাস পরে অনেক দেনদরবার করে জানতে পারেন।

এ ব্যাপারে প্রবাসী সংবাদকর্মীরা রাষ্ট্রদূতের কাছে আবেদন করেন যে, প্রবাসীরা মারা গেলে তাদের লাশ দেশে পাঠানো, মৃত প্রবাসীর প্রাপ্য আদায়ে সহযোগিতা ও প্রত্যেক লাশের সাথে দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি শোকবার্তা প্রবাসীর স্বজনকে যেন পাঠানো হয়।

রাষ্ট্রদূত এ বিষয় শুনে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আবেদন গ্রহণ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন।

কুয়েত শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। বর্তমানে রাষ্ট্রদূত কুয়েতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের বন্ধ থাকা শ্রমবাজার ফের উন্মুক্ত করার জন্য।

এ ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত বলেন, কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই একটি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং হবে। ওই কোম্পানিতে দুই শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পরই উক্ত কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ভিসা বাণিজ্য বন্ধ ও কুয়েতে আসার পর বাংলাদেশি শ্রমিকরা যাতে আকামা জটিলতা, কাজের সমস্যা, আবাসন সমস্যাসহ ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন না হন, সেজন্য দূতাবাস পর্যাপ্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে।

প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। এমন এক দাবির প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও স্থানীয়ভাবে  আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ২০২২ সালের এপ্রিল নাগাদ আন্তর্জাতিক মানের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

এছাড়াও পাসপোর্ট সেবা আরও সহজতর ও প্রবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য চারটি স্থানে পাসপোর্ট সেবাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার বিষয় জানান রাষ্ট্রদূত।

আরো সংবাদ