স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

সৌদিফেরত যুবকের কান্না, তদন্তে পুলিশ

যুবকের নাম শাহিন। ফেনীর দাগনভূঞা থানার বাসিন্দা। চাকরি করতেন সৌদি আরবে। চার বছর পর দেশে ফেরেন তিনি। ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ডাকাতের কবলে পড়েন।

ডাকাতের কবলে পড়ে সবকিছু খোয়ানোর পর মহাসড়কে বসে কাঁদতে থাকা এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বলা হচ্ছে, যুবকের নাম শাহিন। তিনি ফেনীর দাগনভূঞা থানার বাসিন্দা। চাকরি করতেন সৌদি আরবে। চার বছর পর দেশে ফেরেন তিনি। ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে পথে ডাকাতের কবলে পড়েন। ডাকাতরা তার পাসপোর্টও নিয়ে গেছে।

শাহিনের বাবার নাম লোকমান হোসেন। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে শাহিন ছোট। শাহিনের জন্য বিয়ের পাত্রী ঠিক করা হয়েছিল। সেই বিয়ে উপলক্ষে হবু স্ত্রীর জন্য গহনা, নতুন জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলেন। এ ছাড়া তার একাধিক লাগেজ ও নগদ টাকা ছিল।

এ সম্পর্কে শুক্রবার জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, প্রবাসী ওই যুবকের সবকিছু লুটের ঘটনার পর যেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, সেসব ছবির সূত্র ধরে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রবাসী যুবক ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হবে পুলিশ।

ফেসবুকে পোস্ট করা স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘শাহিন সৌদি আরবে চাকরি করে সঞ্চিত অর্থ ও পরিবারের সদস্যদের জন্য আনা উপহারসামগ্রী নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরে নেমে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া হাইওয়েতে রোড ব্লক করে ডাকাত দল তার সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।’

সেই পোস্টে কিছু ছবিও প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা গেছে, যুবকটি মাটিয়ে গড়াগড়ি দিয়ে ডুকরে কাঁদছেন। গাড়িটির গ্লাস ভাঙা।

শাহিনের প্রতিবেশী রফিক জানান, ‌’শাহিনের পুরো নাম আক্রাম হোসেন শাহীন। বাড়ি দাগনভূইয়ার দক্ষিণ আজিজ ফাজিলপুর গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সৌদি থেকে দেশে এসেছিলেন বিয়ে করার জন্য। বেশ কয়েক ভরি সোনার অলঙ্কার ছিল। তার সবই ডাকাতদল নিয়ে গেছে। এ ছাড়া পাসপোর্টও নিয়ে গেছে।’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকের ছবি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই ছবির সূত্র ধরে ভিকটিম ও অপরাধীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ভিকটিম শনাক্ত ও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনরাত পরিশ্রম করেন এই প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের ঘামঝরা অর্থ বাড়িতে পাঠান স্বজনদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে। দীর্ঘ চার বছর পর এই যুবক অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় স্বদেশে ফেরেন। কিন্তু প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটানোর আগে রাস্তাতেই সব হারাতে হলো তাকে। তখন অসহায়ের মতো আর্তনাদ করা ছাড়া তার জন্য আর কিছুই বাকি রইল না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘যাদের রেমিট্যান্স দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর আয়ের উৎস, তাদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি শাহিনের গাড়ি থেকে লুটে নেয়া সব অর্থ ও মালামাল উদ্ধার এবং ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’

ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে দাগনভূঞা থানার ওসি ইমতিয়াজ হোসেন বলেছেন, ‘শাহিনের বাড়ি দাগনভূঞাতে। তবে ঘটনাস্থল অন্যত্র হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।’

আরো সংবাদ