স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

টিকায় আটকে আছে প্রবাসীকর্মীরা, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রেমিট্যান্সে

মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা কোয়ারেন্টাইনের শর্তে যেতে পারলেও, অনেক দেশেই টিকা ছাড়া তারা যেতে পারছেন না।


প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গেল আড়াই মাসে এক লাখ নব্বই হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। করোনার টিকা না নিতে পেরে যাদের অনেকেই আর কাজের জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না। আর, টিকা না নিলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আকামা নবায়ন হবে না প্রবাসীদের। তাই বাংলাদেশে ছুটিতে থাকা প্রবাসীরা নিজ কর্মস্থলে ফেরত যেতে হলে অগ্রাধিকার-ভিত্তিতে টিকা গ্রহণের বিকল্প নেই। স্বভাবতই এ সুযোগ দেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে জনশক্তি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকা প্রাপ্তিতে প্রবাসীদের গুরুত্ব না দেওয়া হলে প্রবাসী আয়ের ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ থেকে টিকা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন বিদেশগামী কর্মীরা। কম সময়ে এবং সহজে অভিবাসী কর্মীদের টিকা দেওয়া হবে।

বিদেশগামী কর্মীদের করোনার টিকা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। যদিও গত শনিবার থেকে দেশে আবারো করোনা প্রতিরোধী টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেখানে প্রবাসীদের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হলেও সে টিকা সহজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ অবস্থায় কুয়েতসহ অনেক দেশেই টিকা ছাড়া প্রবাসীরা যেতে পারছেন না। বর্তমানে করোনা টিকা না পেয়ে কাজ হারাতে বসেছেন কুয়েত থেকে আসা প্রায় ১৫ হাজার প্রবাসী। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজারসহ চার ধরনের টিকা ছাড়া কাজে ফেরত যেতে পারবেন না তারা। কারণ স্থানীয় নাগরিক ও বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের সুরক্ষায় চারটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে কুয়েত সরকার। এর বাইরের অন্য টিকা নিয়ে দেশটিতে যাওয়া যাবে না।
যাদের বৈধ আকামা রয়েছে এবং যারা ফাইজার, অক্সফোর্ড, জনসন ও মডার্নার টিকা গ্রহণ করবেন, তাদের কুয়েত প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। টিকা না নিলে সেপ্টেম্বর থেকে আকামা নবায়ন হবে না কুয়েত প্রবাসীদের। ফলে কাজ হারানোর ঝুঁকিতেও রয়েছেন সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে বিদেশ গমনেচ্ছুকদের ভিড় করেন। সেখানে যারা ভিড় করছেন তারা বলছেন যে, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো টিকা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আশ্বাস পাচ্ছেন না তারা।
এ ছাড়া সৌদি আরব ও কুয়েতগামীদের অনেকে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করলেও চীনের সিনোফার্মের যে টিকা তাদের দেওয়া হবে তা গ্রহণ করার বিষয়ে এখনো কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি দেশগুলো।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসের টিকা না থাকায় বিদেশে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনের জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে প্রবাসী অনেক কর্মীর। এর প্রভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানো কমে যাচ্ছে। তাই সরকারের কাছে অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার ব্যবস্থা করার আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিদেশগামী কর্মীদের টিকা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
রিক্রুটিং এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রোয়াব) সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, অর্থনীতিতে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তারা সহজে টিকা পাচ্ছেন না; বিষয়টি দুঃখজনক। এর আগে প্রথম দফায়ও টিকায় অভিবাসীদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। তাই শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবায়ন করা জরুরি। একই সাথে অভিবাসীদের সহজে ও কম সময়ের মধ্যে টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ১৯ জুন থেকে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল বা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কেন্দ্রে চীন সরকারের উপহারের ১১ লাখ টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য ১০ ক্যাটাগরির নাগরিকদের মাধ্যে ৩ নম্বরে বিদেশগামী কর্মীদের রাখা হয়েছে। বিদেশগামী কর্মীরা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন সনদ নিয়ে টিকা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন বলেন, বিদেশগামী কর্মীদের সহজে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা আগামী সপ্তাহ থেকে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন শুরু করতে পারবেন। যে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই তারা পাসপোর্টের কপি অথবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমআইটি) কার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

সচিব বলেন, ২০ বছরের ওপরে সকল প্রবাসী টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। দেশে ফাইজারের যে টিকা রয়েছে তার থেকে প্রবাসীদের জন্য কিছু টিকা নেওয়া যায় কি না তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, প্রবাসগামীদের যে সমস্যা, এটার সমাধান দিতে পারে এক টিকা, সেটা হলো জনসন অ্যান্ড জনসন। এটার এক ডোজ নিলেই চলবে। এটার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যদি জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা আনা যায়। সৌদি আরব ও কুয়েত বলেছে ফাইজারের বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার একটা ডোজ নিয়ে গেলে তারা ওখানে বাকি একটা ডোজ দিয়ে দেবে।
আমাদের সদিচ্ছার অভাব নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কাজ করছি। সিস্টেম তো একটু লম্বা। সবকিছু করতে গেলে একটু সময় লেগে যাবে। বিদেশগামী কর্মী‌দের করোনার টিকা নি‌য়ে যে জটিলতা তৈ‌রি হ‌য়ে‌ছে তা এক-আধ মা‌সের ম‌ধ্যে সুরাহা হ‌য়ে যাবে।

তাছাড়া সৌদি প্রবাসীদের টিকা পাওয়ার বিষয়ে সরকারের চেষ্টা করছে। তবে সমস্যা হলো সৌদি চাইনিজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে রাজি না। আমরা কিন্তু এরমধ্যে এটা নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমি এটা নিয়ে সৌদিতে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা চেষ্টা করছি সৌদি যেন চাইনিজ ভ্যাকসিনটা গ্রহণ করে। এটাতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত।

মন্ত্রী জানান, ফাইজারের বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য প্রয়োজনে খরচ যদি আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে দিতে হয় আমরা সেটা দিতে রাজি আছি। যেহেতু এটা আমাদের প্রবাসীদের কল্যাণে, তাই আমরা সবকিছু করতে রাজি আছি।

আরো সংবাদ