স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ভ্যাকসিন অনিশ্চয়তায় প্রবাসীরা !

করোনার টিকা নিয়ে মহা টেনশনে প্রবাসীরা। নিদির্ষ্ট সময়ে টিকা দিতে না পারলে অনেকের অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বিদেশ গমন। হারাবে প্রবাসের চাকরিও। এ নিয়ে চরম এক অনিশ্চিয়তা নিয়ে প্রতিদিন তারা ধর্ণা দিচ্ছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিস এবং চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে। বিভিন্ন দাবি নিয়ে ইতোমধ্যে এই দুই সরকারি অফিসে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।

প্রবাসীরা জানায়, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটিতে আসার পর করোনা প্রভাব বেড়ে যায়। এ নিয়ে সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা নিয়ে নতুন নতুন নিয়ম চালু করে। এতে বেকায়দা পড়েন প্রবাসীরা। বর্তমানে কোন দেশই ভ্যাকসিন সনদ ছাড়া প্রবাসীদের সেদেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। টিকা নিয়ে সমস্যা এখানেই শেষ নয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো ভ্যাকসিনের নাম নিদির্ষ্ট করে দেওয়ায় প্রবাসীরা আরো বেশি বেকায়দা পড়েন। কারণ সেসব দেশে উল্লেখিত টিকাগুলো বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয়নি। কিংবা খুব সহসা এদেশে নিয়ে আসার সম্ভাবনায়ও ক্ষীণ।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কবে থেকে তাদের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে এই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই তাদের টিকা প্রয়োগ শুরু হতে পারে। সে লক্ষ্যে মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে টিকা দেয়ার স্থান হিসেবে।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিদেশগামী কর্মীদের টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সুরক্ষা এপে প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সেখানে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ২০ এবং তদুর্ধ্ব বছরের সবাই এখানে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। নিবন্ধন করতে এনআইডি লাগবে না।’

‘তবে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, বৈধভাবে কর্মী হিসেবে তাদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই যারা বৈধভাবে কর্মী হিসেবে বিদেশ যাবেন, কেবল তারা সবাই টিকার আওতায় আসবেন।’

প্রসঙ্গত, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদেশগামী কর্মীদের টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করছে অনেক দেশ। সামনের দিনগুলোতে কমবেশি সব দেশই কর্মী প্রবেশে এমন শর্ত জুড়ে দেয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে স্থানীয় নাগরিক ও বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের সুরক্ষায় চারটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে কুয়েত সরকার। যাদের বৈধ আকামা রয়েছে এবং যারা ফাইজার, অক্সফোর্ড, জনসন ও মডার্নার যেকোন একটি গ্রুপের টিকা গ্রহণ করবে, তাদেরই কুয়েত প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কুয়েত সরকারের এ ঘোষণায় বেকায়দায় পড়েছেন প্রবাসীরা। কারণ এ মুহূর্তে দেশে নতুন করে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশে ছুটিতে আসা কুয়েত প্রবাসীদের মধ্যে যারা সেদেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন তারাও নতুন করে বিপদের মুখে পড়েছেন। এক দিকে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুই ধরনের সংকটে পড়েছেন কুয়েত প্রবাসীরা। কুয়েত প্রবাসীদের বিপদ এখানে শেষ নয়, টিকা না নিলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তাদের আকামা নবায়ন করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে সে দেশের সরকার।

এ প্রসঙ্গে কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ হাসেম বলেন, আমাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছি। প্রবাসীদের এ বিপদের সময়ে সরকারের সহযোগিতা জরুরিভাবে প্রয়োজন, দেশে যারা ছুটিতে আছে, তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে কুয়েত সরকার অনুমোদিত টিকা দিতে হবে। অন্যথায় বড় ধরনের বিপদে পড়ে যাচ্ছেন প্রবাসীরা।’

কুয়েতের মতো সৌদি আরবেও একই সমস্যা পড়েছেন প্রবাসীরা। সেদেশে সিনোফার্ম টিকার এখনো অনুমোদন মেলেনি। অথচ চীনের তৈরি সর্বশেষ সিনোফার্ম টিকা এসেছে বাংলাদেশে। এদেশের এসব টিকা প্রয়োগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই অবস্থা সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও। সেদেশেও নিদির্ষ্ট টিকার নাম উল্লেখ করছে বলে প্রবাসীদের অভিমতে জানা গেছে।

এদিকে গত বেশ কয়েকদিন ধরে উৎকণ্ঠিত প্রবাসীরা ভ্যাকসিন টিকা গ্রহণের জন্য জেলা সিভিল সার্জন অফিস এবং চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ধর্ণা দিচ্ছে। এ নিয়ে দফায় দফায় স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। স্মারকলিপিতে তারা ৪ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে- সুরক্ষা এ্যাপস চালু করে প্রবাসীদের ভ্যানসিন প্রদান, সুরক্ষা এ্যাপস-এ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এনআইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রবাসে থাকা সিংহভাগ প্রবাসীর নিকট এনআইডি কার্ড নেই। তাই বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভ্যাকসিন প্রদান নিশ্চিত, বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকেরই ভিসার মেয়াদ অতিক্রান্ত হচ্ছে। তাদের এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সাথে আলোচনা করে দ্রুত ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং বিদেশ গমন সংক্রান্ত সকল নিয়মকানুন সহজকরণ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে প্রবাসীদের দেওয়া স্মারকলিপিগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার বিষয়টি সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। সুরক্ষা এ্যাপসে নতুন করে সৃষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলো আশা করি খুব সহসা সমাধান হয়ে যাবে।’

টিকার নিবন্ধন শুরু প্রসঙ্গে মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত আমরা কোন নির্দেশনা পায়নি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

আরো সংবাদ