স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

জুলাইয়ের ৯৮% কোভিড রোগী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত: গবেষণা

দেশে জুলাই মাসে কোভিডে আক্রান্ত ৩০০ জনের নমুনা থেকে পাওয়া করোনাভাইরাসের জিন বিশ্লেষণ করে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এবং এ গবেষণার পৃষ্ঠপোষক অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার তাদের এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ৩০০ নমুনার জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যা ভারতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। এছাড়া ১ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে সাউথ আফ্রিকায় প্রথম পাওয়া বেটা ভ্যারিয়েন্টের কারণে।

“যদিও আমাদের গবেষণায় প্রথম ১৫ দিনে এই সংখ্যা ছিল ৩ শতাংশ। একজন রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছি, মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট অথবা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট (তদন্তাধীন ভ্যারিয়েন্ট)।”

চলতি বছরের ২৯ জুন থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

গবেষকরা জানান, তথ্য বিশ্লেষণের জন্য দেশের সবগুলো বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করেন তারা। মোট ৩০০ কোভিড পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।

উপাচার্য বলেন, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ পুরুষ, যাদের বয়স ৯ মাস থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি।

“যেহেতু কোনো বয়সসীমাই কোভিড-১৯ এর জন্য ইমিউন করছে না, সে হিসেবে শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণের ‘ঝুঁকি নেই’- এমনটা বলা যাচ্ছে না।”

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মত ‘কো-মরবিডিটি’ রয়েছে, তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি বলে গবেষণায় দেখা গেছে। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব বয়সী রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকছে।

উপাচার্য বলেন, এ গবেষণায় টিকার কার্যকারিতার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে, সে কাজ চলমান রয়েছে।

গবেষণার তথ্য থেকে তুলে ধরে শারফুদ্দিন আহমেদ জানান, বাংলাদেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আলফা ভ্যারিয়েন্টের (যুক্তরাজ্যে উদ্ভূত) সংক্রমণ হার বেশি ছিল। পরে ২০২১ সালের মার্চের তথ্যে সাউথ আফ্রিকায় প্রথম পাওয়া বেটা ভ্যারিয়েন্টের দাপট দেখা যায়।

এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউর জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইদুর রহমান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক অধ্যাপক একেএম মোসারফ হোসেন তার সঙ্গে ছিলেন।

কোভিড-১৯ এর জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরণ এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সাথে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশে কোভিড-১৯ জিনোম ডাটাবেইজ তৈরি করাই এ গবেষণার লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে গবেষণার প্রথম মাসের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরের মাসগুলোতেও হালনাগাদ ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।

অন্য অনেক ভাইরাসের মতো নতুন করোনাভাইরাসও ক্রমাগত রূপ বদল করে চলছে। এর মধ্যে গত বছর ভারতে এর যে পরিবর্তিত একটি রূপ শনাক্ত হয়, তা নাম দেওয়া হয় ডেল্টা।

এই ধরন বা ভ্যারিয়েন্টটি (বি.১.৬১৭.২) অতি সংক্রামক হওয়ায় ইতোমধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে অসুস্থতার মাত্রাও আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে, বিশেষ করে যারা টিকা পায়নি, তাদের ক্ষেত্রে।

আরো সংবাদ