স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হবে কক্সবাজার

বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কক্সবাজার হবে বিশ্ব যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু। পাশাপাশি এবারও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জুড়ে ছিল কক্সবাজার ঘিরে তাঁর বাবার স্মৃতিচারণ। গতকাল রোববার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সমপ্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের প্রতি জাতির পিতার আলাদা আকর্ষণ ছিল। তিনি তো জেলখানায় থাকতেন বেশিরভাগ সময়। কিন্তু যখন জেলের বাইরে থাকতেন, তখন প্রতি বছর শীতকালে আমাদেরকে নিয়ে একবার কক্সবাজার বেড়াতে যেতেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার একটা আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবে, যেটা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে আর বাংলাদেশ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। এটাই তাঁর স্বপ্ন ছিল। কক্সবাজার হবে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজারে আরও সুপরিসর বিমান যেন নামতে পারে সেইভাবে কক্সবাজার এয়ারপোর্টকে আমরা উন্নত করব। আমাদের মনে এটাই ছিল। এটাকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে উন্নীত করব।তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরি করে দেওয়া হবে। তাতে করে সমুদ্রের জলোচচ্ছ্বাস থেকে এই অঞ্চলগুলি বাঁচবে, আবার দৃষ্টিনন্দনও হবে। পর্যটকদের জন্য সুবিধা, সব দিক দিয়ে উন্নত হবে। কিছুটা মেরিন ড্রাইভ করেছি, আরও কাজ আমরা করে যাচ্ছি।শেখ হাসিনা বলেন, রেললাইনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রাস্তাটাকে উন্নত রাস্তা হিসাবে আমরা তৈরি করে দিচ্ছি। একসময় কক্সবাজার এয়ারপোর্টে নামলেই শুটকির গন্ধ পাওয়া যেত। এখন খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় আধুনিক শুটকির হাট করে দেওয়া হবে। পর্যটকেরা সেটাও যেন দেখতে পারে। শুটকির গন্ধ পাবে না, শুটকি দেখতে পারবে।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিদেশিদের জন্য আলাদা জোন করার বিষয়ে তিনি বলেন, স্যান্ডি বিচ যাকে বলে এটা কম আছে পৃথিবীতে। সেখানে বিদেশিদের জন্য স্পেশাল জোন করে দেব। যেখানে শুধু বিদেশিরাই আসতে পারবে, যেতে পারবে। তারা তাদের মতো করে যেন উপভোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ভবিষ্যতে এই কক্সবাজারই হবে দেশের অর্থনৈতিক প্রাণ কেন্দ্র-এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই এয়ারপোর্ট সমপ্রসারণ হলে আমি মনে করি, প্রাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে বা প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্যে যত প্লেন যাবে এসব বিমানের রিফুয়েলিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক জায়গা হবে এই কক্সবাজার। একসময় হংকং, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, দুবাই ছিল। কিন্তু আমি বলতে পারি, ভবিষ্যতে এই কক্সবাজারই হবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। খুব স্বল্প সময়ে এখানে বিমান নামতে পারবে, রিফুয়েলিং করতে পারবে, যেতে পারবে।পাশাপাশি কক্সবাজার ঢেলে সাজানোর কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা এত চমৎকার করে কক্সবাজারকে সাজাবার পরিকল্পনা নিয়েছি, সোনাদিয়াতে ইকোপার্ক করে দেব, যাতে সম্পূর্ণ ন্যাচারাল বিউটি থাকবে, ন্যাচারাল জিনিসগুলি থাকে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু বা যা কিছু আছে, শামুক-ঝিনুক থেকে শুরু করে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আছে, সবকিছু যেন রক্ষা পায়। মানুষ যেন এগুলো উপভোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিচ্ছি। কক্সবাজার হবে বিশ্ব যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু। মহেশখালী এখন গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তর হয়ে গেছে। টেকনাফে ইকোনোমিক জোন করা হবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থাটাকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এই কক্সবাজার।বাবার সঙ্গে উখিয়া ভ্রমণের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখনকার কক্সবাজারের অবস্থা এ রকম ছিল না। তখন ছোট ছোট কটেজ ছিল, কাঠের ঘর ছিল। সে কটেজ ভাড়া করে থাকতে হত। এমনকি আমরা বঙ্গবন্ধুর সাথে উখিয়াতে গেছি। তখন ঘন জঙ্গল ছিল উখিয়ায়। উখিয়াতে জঙ্গলের পথ বেয়ে আমাদের যেতে হয়েছে। আমরা সেখানে ডাকবাংলোতে ছিলাম। রাতের বেলায় বাঘের গর্জন, পাখির ডাক, হাতির ডাক সবই শোনা যেত।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝাউবনও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বিজড়িত-এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজারে যে বড় ঝাউবনটি দেখেন সেটাও কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের করা। কক্সবাজার যে সী বিচ, পৃথিবীর কোনো দেশে এত লম্বা বালুকাময় সি বিচ নাই। ৮০ মাইল লম্বা সী বিচ। এটাকে আরও উন্নত করে আকর্ষণীয় করা এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা তাঁর একটা স্বপ্ন ছিল। আমরা স্পিড বোটে একসময় মহেশখালী যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমার আব্বার সাথেই। কিন্তু হঠাৎ সাগর খুব উত্তাল হয়ে যাওয়ায় যেতে পারিনি। পরবর্তীতে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, বদরখালী থেকে শুরু করে টেকনাফ, সব জায়গায় ঘুরেছি। আমরা সেন্টমার্টিনও গিয়েছি।কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রান্ত থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিমান বাহিনী প্রধান শেখ আব্দুল হান্নানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।প্রসঙ্গত সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১৭০০ ফুট ভরাট করে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ৯ হাজার ফুটের রানওয়ে সমপ্রসারণ করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে দেশের দীর্ঘতম বিমানবন্দর।বেবিচক সূত্র জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর নির্মিতব্য এ রানওয়ের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলে কক্সবাজারের পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরো সংবাদ