স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ক্ষেত্রে ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অনেক ধারণাই এসেছে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাথা থেকে। তবে জয় রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কিনা, সেটা নির্ভর করছে তার এবং দেশের জনগণের ওপর। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো সংকটে পড়বে না বলেও জানান তিনি। নদীর পানি বণ্টনের, বিশেষ করে তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ এতে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তার ভারত সফরের আগের দিন গতকাল রোববার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে এএনআই। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা জয় রাজনীতিতে আসবেন কিনা, সেই প্রশ্নে তার মা শেখ হাসিনা বলেন, দেখুন, সে তো একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। তাই এটা তার ব্যাপার। কিন্তু সে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করেছি, সেখানে স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল বা কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মতো সমস্ত ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ধারণা তার। আর আপনারা জানেন, সে (জয়) আমাকে সহায়তা করে যাচ্ছে এবং এই সে যে কাজ করে যাচ্ছে, সেজন্য দলে বা মন্ত্রণালয়ে কখনও কোনও পদ নেওয়ার কথা ভাবেনি। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে কর্মীরা যে জয়কে দলের বড় কোনো পদে আনার জোর দাবি জানিয়েছিলেন, সে কথাও সাক্ষাৎকারে বলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কর্মীদের ওই দাবির পর সম্মেলনে কী ঘটেছিল, সেই বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ওকে ডেকে বললাম, তুমি মাইক্রোফোনে গিয়ে বল তুমি কি করতে চাও। ও তখন মাইক্রোফোন নিল, বলল, না, এই মুহূর্তে দলে কোনো পদ আমি চাই না। বরং যারা এখানে কাজ করছেন, তাদেরই পদ পাওয়া উচিত। কেন আমি একটি পদ দখলে রাখব? আমি আমার মায়ের সাথে আছি, দেশের জন্য কাজ করছি এবং মাকে সহায়তা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার ভাবনাগুলো এ রকমই। এমন নয় যে, ওকে আমার পদ দিতে হবে বা সে রকম কিছু করতে হবে। দলের কর্মীদের ওই আহ্বানে জয়ের এখন সাড়া দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কিনা-সেই প্রশ্ন শেখ হাসিনার কাছে রেখেছিল এএনআই। উত্তরে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে জনগণের ওপর।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর জয় কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে। ২০১৩-এর মাঝামাঝি সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জয় দেশে এসে রাজনীতি নিয়ে কথা বলে আলোচনার ঝড় তোলেন। নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে তিনি বিভিন্ন জেলা সফর করে সমাবেশ ও আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের রূপকল্প বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি আওয়ামী লীগের গবেষণা ও প্রচারনা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের চেয়ারম্যান। ছোট বোন সায়মা ওয়াজেদ প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারপারসন।
এনএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সঙ্গে ‘পরীক্ষিত বন্ধুত্বের’ নানা দিক নিয়েও কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
শ্রীলঙ্কার মতো সংকটে পড়বে না বাংলাদেশ : বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পথে যেতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের সময়ও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেছে। ঋণ নেওয়ার আগে তার সরকার অনেক ভাবনা-চিন্তা করে নেয়।
সাক্ষাৎকারে দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বই বর্তমানে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আমাদের অর্থনীতি তা-ও যথেষ্ট শক্তিশালী। আমরা করোনা মহামারির সময়ে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। এখন রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। এই সবকিছুরই প্রভাব পড়বে। কিন্তু ঋণের দিক থেকে দেখলে, বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়েই ঋণ মিটিয়ে দেয়। আমাদের ঋণের হারও খুব কম। শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের অর্থনীতির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অত্যন্ত হিসাব করে করা হয়।
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তিনি বলেন, ভারত একটি বিশাল দেশ। তারা রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হলেও সেখানে খুব বেশি শরণার্থী নেই। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। তাই আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায় এবং আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করছি যে, তাদেরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে তারা দেশে ফিরে যেতে পারে।
শেখ হাসিনাকে নদীর পানি বণ্টনে বিশেষ করে তিস্তা নদীর ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে তার দেশের সহযোগিতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জ থাকলেও সেগুলো এমন কিছু নয় যা পারস্পরিকভাবে সমাধান করা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক যে, বিষয়গুলো ঝুলে আছে। আমাদের এখানে ভারত থেকে পানি আসে, তাই ভারতের আরও উদারতা দেখাতে হবে। কারণ এতে উভয় দেশই লাভবান হবে। কখনও কখনও পানির অভাবে আমাদের জনগণও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তায় পানি না পেয়ে আমরা ফসল রোপণ করতে পারিনি এবং আরও অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই আমি মনে করি, এর সমাধান হওয়া উচিত।
টিকা দেওয়ার কারণে করোনাকালে বাংলাদেশ কতটা উপকৃত হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।

আরো সংবাদ