স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

১৩ বছর ধরে ফটিকছড়ির সুয়াবিলে নির্বাচন হচ্ছে না

দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ১১ নং সুয়াবিল ইউনিয়নে নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দিরেক থেকে ৩২ হাজার বাসিন্দার এই ইউনিয়নে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে ফটিকছড়ির দৌলতপুর, সুয়াবিল ও হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নকে নিয়ে “নাজিরহাট পৌরসভা” গঠনের প্রজ্ঞাপন ঘোষনা করে সরকার। অপরদিকে ফটিকছড়ির ধুরুং ও রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নকে নিয়ে “ফটিকছড়ি পৌরসভা” গঠনেরও প্রজ্ঞাপন ঘোষণা করা হয়।

প্রস্তাবিত দুই পৌরসভার পক্ষে বিপক্ষে মামলা মোকদ্দমা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। ২০১১ সালে গঠিত হয় ফটিকছড়ি পৌরসভা এবং নির্বাচন হয় ২০১২ সালে। অপরদিকে ২০১৪ সালে গঠিত হয় নাজিরহাট পৌরসভা। তার আগে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ও সুয়াবিল ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড রেখে বাকি এলাকা ইউনিয়ন ঘোষনা করা হয়।

২০১৮ সালে নাজিরহাট পৌরসভার নির্বাচনও হয়। কিন্তু দুর্ভোগে পড়েন সুয়াবিল ইউনিয়নের মানুষজন। ২০০৬ সালের পর কোন নির্বাচন হয়নি এখানে। একজন চেয়ারম্যান, তিনজন পুরুষ ও একজন মহিলা সদস্য নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ৭০ দশমিক ৮ বর্গকিমি ও ৩১ হাজার ৬৫০ জন জনসংখ্যার ইউনিয়নটি।

অদৃশ্য কালো হাতের ইশারায় এখানে নির্বাচন হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার মানুষজন।

ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, ৯টি মৌজা দক্ষিণ সুয়াবিল, সুয়াবিল, বারমাসিয়া, লট বারমাসিয়া, শোভনছড়ি, জঙ্গল শোভনছড়ি, হাজিরখীল, উদালিয়া, লট উদালিয়া, বেতুয়া, পশ্চিম মন্দাকিনী নিয়ে সুয়াবিল ইউনিয়ন। এখানে সাক্ষরতার হার ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ইউনিয়নে ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা ও ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান রয়েছে পৌরসভার ভিতর। ইউনিয়নবাসীকে সেবা গ্রহণের জন্য যেতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল এলাকা পার হয়ে পৌর এলাকায়। এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতা রয়েছে। কৃষিজীবী মানুষগুলোর কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে।

সুয়াবিলের বাসিন্দা, শিক্ষক বাবলা দে জানান, ৯ জন সদস্য, ৩ জন মহিলা সদস্য ও ১ জন চেয়ারম্যানের স্থানে মাত্র ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন মহিলা সদস্য ও ২ জন পুরুষ সদস্য দিয়ে সুয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের কাজ চলছে। ফলে প্রায় ৩২ হাজার জনসাধারণের বৃহৎ এই অঞ্চলের মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই দ্রুত নির্বাচন দরকার।

সুয়াবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আহমদ হোসেন তালুকদার অভিযোগ করে জানান, চেয়ারম্যান আবু তালেবের নানান কলাকৌশলে এই ইউনিয়নে ১৩ বছর যাবৎ নির্বাচন হচ্ছে না। চেয়ারম্যান তার ইচ্ছেমতো সামাজিক সুরক্ষা সেবা ও করোনাকালীন সহায়তাগুলো বিতরণ করেছে। সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে না। এই ইউনিয়নের মানুষ দ্রুত নির্বাচন চায়।

সুয়াবিলের বাসিন্দা সমাজসেবক মো. মহিউদ্দিন বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই করুণ, বলার কোন ভাষা নেই। এখানে সামাজিক বিচার-আচার, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। এখানে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি দপ্তরে হেঁটেছি। নির্বাচন কমিশন সচিব কবিতা খানমের সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানিয়েছি। এই সপ্তাহ নয়, ওই সপ্তাহ তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু কোন এক অপশক্তির ইশারায় আর তফসিল ঘোষণা হয় না।

অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান আবু তালেব চৌধুরী বলেন, ২০০৬ সালের উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হই। সীমানা জটিলতা ও পৌরসভার কারণে নির্বাচন হয়নি এতোদিন। সব জটিলতা শেষ। এখন নির্বাচন দেয়া, না দেয়া নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সুয়াবিল ইউনিয়নে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপাতত কোন আইনি জটিলতা নেই। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলেই নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি নেয়া হবে।

আরো সংবাদ