হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু টেনশনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ‘টেনশনে’ তাঁর ‘হার্ট ফেল’ হয়েছিল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসায় টানা দুদিনের বিক্ষোভের জের ধরে এক পর্যায়ে অবরুদ্ধই ছিলেন মাদ্রাসার গত প্রায় ত্রিশ বছরের পরিচালক শাহ আহমদ শফী, যিনি বাংলাদেশে হেফাজত ইসলাম নাম কওমি ধারা সংগঠনের শীর্ষ নেতা ছিলেন।
মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যকার বিরোধের জের ধরে মাদ্রাসার ভেতরে ভাংচুর ও বিক্ষোভের পর বিক্ষোভকারীরা যেসব দাবি জানিয়েছিলো তাঁর মধ্যে ছিলো আহমদ শফীর সম্মানজনক অব্যাহতির বিষয়টিও।
ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে আল্লামা শফী স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও এর জন্য অনেকটা বাধ্য হন তিনি। ছাত্রদের বিক্ষোভ-ভাঙচুরে অনেকটা বাধ্য হয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আহমদ শফী ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানী তার পিতার জানাজা ও দাফনের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে অবহিত করেন।
মাদানী এক পর্যায়ে বলেন, “আমার আব্বা দীর্ঘদিন রোগে ভুগলেও ভালোর দিকে ছিলেন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে আব্বাজান হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলেন ও উনাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন আব্বা টেনশনের কারণে হার্ট ফেল করেছিলেন। সেজন্যই আজ এ অবস্থা”।
হাটহাজারির ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “এ অবস্থায় ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে ওই কথাগুলো আমি কিছু বলতে চাইনা”।
মাদ্রাসায় যারা বিক্ষোভ করেছিলেন তাদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার রাতের শুরা বৈঠকে নিজের অব্যাহতির পাশাপাশি ছেলে আনাস মাদানীকেও স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আহমদ শফী।
মাদানী জানান, আহমদ শফীর ইচ্ছে অনুযায়ী তার একটিই জানাজা হবে শনিবার বেলা দুটায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় এবং এর পর সেখানকার কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে।
“আমার আব্বা সারাজীবন এক জানাজার পক্ষে ছিলেন। এটাকে কেউ ভিন্নখাতে নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না দয়া করে,” বলেন আনাস মাদানী।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর তার নামে অনেক মামলা হলেও সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেনি। পরবর্তী সময়ে সরকারের তার সম্পর্কের উন্নতি হয়। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদ মূলত তার হাত ধরেই আসে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে অনেক শ্রদ্ধা করতেন। আল্লামা শফীর নেতৃত্বে শীর্ষ আলেমদের দাওয়াত করে নেন কয়েক বার।