স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

স্বাস্থ্যসচিবের অনুরোধে প্রবাসীদের করোনা টেস্টের ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানের অনুরোধে প্রবাসীদের জন্য করোনা টেস্টের ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত করোনার সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বিভাগের প্রস্তুতি বিষয়ক মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যসচিব নিজেই এ তথ্যটি জানিয়েছেন।

বর্তমানে বিদেশগামী যাত্রীরা ১ হাজার ৫০০ টাকায় করোনা টেস্ট করাতে পারছেন।

করোনার মধ্যেও ১৮ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের দেশের মানুষ আমাদের সম্পদ। আমরা গতকালকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা বিদেশে যাবে তাদের জন্য দেড় হাজার টাকা লাগবে না পিসিআর টেস্টের জন্য।

‘মাননীয় মন্ত্রীকে বললাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমার কথা বলুন। বলুন যে, আমি প্রবাসীদের জন্য করোনা টেস্ট ফ্রি করে দিতে চাই। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ফ্রি করা ঠিক হবে না। সচির চাইছে যেহেতু ৩০০ টাকা করে দাও। এটা গতকালের সিদ্ধান্ত। এটা একটা বড় নিউজ আজকের জন্য।’-বলেন স্বাস্থ্যসচিব।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রবাসী কল্যাণ সচিব সালেহীনকে বলেছি, তুমি একটা কার্ড দিবা প্রবাসীদের, যাতে এটা দেখালে বোঝা যায় যে, এই লোকটা বিদেশে যাবে। সাথে সাথে তিনি তিনশ’ টাকা দেবেন। যদি তিনি মনে করে যে বাসা থেকে টেস্ট করাবেন তাহলে সেই সুযোগও তিনি পাবেন।’

আপাতত মাস্ককে ভ্যকসিন হিসেবে ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে সচিব বলেন, করোনা প্রতিরোধে মাস্ক অত্যস্ত কার্যকর, এটা প্রমাণিত। আমরা তিনজন একসাথে বসলে যদি সবার মাস্ক থাকে, তাহলে ৯৮ শতাংশ নিরাপদ। আমার নেই, দুইজনের আছে, তাহলেও ৬০ শতাংশ নিরাপদ। কোনো ওষুধের দরকার নেই, আপাতত শুধুই মাস্ক ব্যবহার করুন।

ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-অ্যাস্টেজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ৫০ লাখ টিকা বাংলাদেশে আসবে জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ৫০ লাখ ভ্যাকসিন ২৫ লাখ মানুষকে আমরা দিতে পারবো। এর আয়োজন আমরা করেছি। সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমাদের ২৫ হাজার স্বাস্থ্যসহকারী প্রস্তুত আছেন। প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আমরা বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত করে রেখেছি টিকার কাজে ব্যবহারের জন্য।

টিকার ব্যাপারে বাংলাদেশের পারদর্শীতা সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত উল্লেখ করে সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তিন তিনটা পুরস্কার পেয়েছেন। ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। যদি কোম্পানিতে ভ্যাকসিনটা আসে তাহলে আপনারা সহযোগিতা করবেন। চট্টগ্রামে অনেক বড় বড় শিল্পপতি আছেন, তাদের কাছে আমি অনুরোধ করবো আপনারা আগে যেভাবে এগিয়ে আসছেন, এবারও এগিয়ে আসবেন।

চট্টগ্রামের প্রাক্তন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেন, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চট্টগ্রাম থেকে আমি বদলি হয়ে ঢাকায় যাই। এই সার্কিট হাউস থেকে আমি বিদায় নিয়ে যাই। এরপর আজকেই আমার প্রথম এখানে আসা। আমি নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি বারবার।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পাশেই বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হবে জানিয়ে সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন চট্টগ্রামে একটা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট করতে হবে। ঢাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটটি হয়েছে। এতবড় এবং এত সুন্দর হাসপাতাল আমি আর কোথাও দেখিনি বাংলাদেশে। অন্য দেশেও খুব কম আছে।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অনুসরণের অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘আজকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে দেখলাম একটা অ্যাম্বুলেস যা ড. হাছান মাহমুদ সাহেব রাঙ্গুনিয়ার মানুষদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন। ফ্রি অ্যাম্বুলেস, এটা দেখে আমার ভালো লেগেছে যে উনার নাম লেখা আছে সেখানে। আপনাদেরকেও আমি অনুপ্রাণিত করতে চাই আপনারা এই কাজটি করুন। আপনাদের নাম লেখা থাকবে। মানুষের সেবায় আপনারা এগিয়ে আসুন। এটি আমি অনুরোধ করবো।

একজন সাধারণ করোনা রোগীর পেছনে সরকারের একলাখ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, অক্সিজেন ও ভ্যান্টিলেশনের প্রয়োজন হলে খরচ হচ্ছে চার লক্ষ টাকা। পনের দিন হসপিটালে থাকলে চার লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। সরকার হাজার হাজার মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ৬১০টি হসপিটাল একসাথে সারা বাংলাদেশে কাজ করছে। আমাদের ত্রিশ হাজার ক্যাডার ডাক্তার আছে। আমাদের সারাদেশে ৯০ হাজার ডাক্তার আছে। যারা সরকারি এবং বেসরকারি ডাক্তার। এই ডাক্তাররা সকলেই কিন্তু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছে।

অতিমারির মধ্যে যারা ব্যবসা করবে তাদেরকে ছাড়া হবে না জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান বলেন, তাদের ব্যাপারে আমরা কঠিন ব্যবস্থা নিব এবং নিচ্ছি। আমাদের মোবাইল কোর্ট প্রতিদিন কোথাও না কোথাও যাচ্ছে।

দেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক আছে জানিয়ে সচিব বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে আমার একটি অনুরোধ থাকবে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যাতে চলতে পারে। সেখানে ৩২ প্রকারের ওষুধ আমরা বিতরণ করছি বিনামূল্যে। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্রেইন চাইল্ড। উনি নিজেই এই কাজটি করেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের হিসাব উনার কাছেই আছে। কাজেই এটাতে আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, আপনারা এটা একটু দেখবেন।

চট্টগ্রামে করোনার মৃত্যুহার কম জানিয়ে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, পৃথিবীতে করোনার দ্বিতীয় ওয়েব চলছে, সেখানে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছে দুইজন। এটা একটা অসাধারণ বিষয়। চট্টগ্রাম জেলাতে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করেছে একজন। ন্যাশনালি মৃত্যুর যে রেট সেই তুলনায় চট্টগ্রামে কম।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার এসএম মেহেদী হাসান, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ।

আরো সংবাদ