স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতটুকু?

অস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনার টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশ সরকার এটির ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপি ও স্কাইনিউজের খবরে এমন তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, ওষুধ কোম্পানি অস্ট্রাজেনেকো ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন করা করোনাভাইরাসের টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাপকভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার সুযোগ বেড়েছে।

সরকারের মুখপাত্র বলেন, এই টিকার অনুমোদনে ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ’র সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সরকারই প্রথম এই টিকার অনুমোদন দিয়েছে বলে খবরে জানানো হয়েছে।

যা প্রতিদ্বন্দ্বী ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকার প্রায় কাছাকাছি। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, আগামী ৪ জানুয়ারি থেকে অক্সেফোর্ডের টিকার ব্যবহার শুরু হবে। এতে দেশের টিকাদান কর্মসূচির গতি আরও বেগবান হবে।

তিনি বলেন, এটা খুবই ভালো খবর। এটা আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করবে। এই টিকা মহামারী থেকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে পারবে।

ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা– তিনটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ২০২১ সাল নাগাদ ৫৩০ কোটি টিকা বিতরণের পূর্বাভাস দিয়েছে। অধিক চাহিদার দরুণ ২০২৩ বা ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্বল্পআয়ের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা সহজলভ্য হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

এর আগে এত কম সময়ের মধ্যে কোনো সংক্রামক রোগের টিকা উদ্ভাবন হয়নি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিনে উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত জানুয়ারিতে ভাইরাসটির জেনেটিক সিকোয়েন্স প্রকাশ পেয়েছে। এতে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জরুরি আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ও প্রতিষেধক আবিষ্কার ত্বরান্বিত করেছে।

মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গত ১১ ডিসেম্বর জরুরিভিত্তিতে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এটাকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রক্রিয়ার পরবর্তী স্তরে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ফল পাওয়া গেছে ফাইজারের টিকায়।

এর আগে ব্রিটেনেও এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি মিলেছে। দেশটি চার কোটি ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।

এ ছাড়া ম্যাসাচুসেটসের ক্যামব্রিজভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি মডার্নার টিকারও অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ টিকার কার্যকারিতা ৯৪.১ শতাংশ বলে দেখা গেছে। ফাইজার ও মডার্নার টিকার মধ্যে অনেক মিল থাকলেও ফারাকও আছে। মডার্নার টিকা একটু বেশি নমনীয়। দুই টিকার কার্যকারিতাও কাছাকাছি পর্যায়ের।

মডার্নার টিকা ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের লোকজনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ফাইজারের টিকা ১৬ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ফাইজারের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে আছে, ইনজেকশনের স্থলে কয়েক দিন ব্যথা অনুভব করা। এ ছাড়া ক্লান্তি চলে আসে, মাথা ও পেশিতে ব্যথা, সর্দি-কাঁপুনি, শরীরে সংযোগস্থলে ব্যথা ও জ্বর হতে পারে।

মাল্টি সিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিন্ড্রোমসহ মডার্নার টিকারও মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। টিকা গ্রহণের পর ব্যাপক অ্যালার্জি সমস্যার কথা জানিয়েছেন বোস্টনের এক চিকিৎসক। এ ছাড়া মাথা ঝিমঝিম করা ও হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

তবে করোনার নতুন যে ধরন পাওয়া গেছে, সেটি প্রতিরোধেও মডার্নার টিকা কার্যকর বলে কোম্পানিটি জানিয়েছে। আশ্বাস দিয়ে বলছে, এ ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আর বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উঘুর শাহিন বলেন, ছয় সপ্তাহের মধ্যে করোনার নতুন ধরনের টিকা উদ্ভাবন সম্ভব হবে।

এছাড়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়/অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাও পরীক্ষার পর্যায়ে আছে। এটি বয়স্ক লোকদের শরীরে জোরালো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পেরেছে বলে উপাত্তে বলা হয়েছে। বিশ্বে সর্বপ্রথম টিকার অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। দেশটির স্পুটনিক ভি টিকা অক্সফোর্ডের মতোই কাজ করে, যার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ বলে দেখা গেছে।

জ্যানসেনসের টিকার পরীক্ষার জন্য ব্রিটেনে ছয় হাজার ও বিশ্বজুড়ে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে বাছাই করা হয়েছে। উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টস ও সিনোফার্মের টিকার পরীক্ষাও চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

আরো সংবাদ