স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

স্থায়ীভাবে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলো টুইটার

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে ব্লক করে দিয়েছে টুইটার। বুধবার মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতার প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি।

‘ট্রাম্পের ব্যক্তিগত @realDonaldTrump অ্যাকাউন্টটি থেকে সাম্প্রতিক কিছু টুইট পর্যবেক্ষণের পর তা থেকে যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে সহিংসতা উসকে দেওয়ার ঝুঁকি এড়াতে আমরা তার অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’, টুইটের মাধ্যমে জানায় টুইটার।

এই প্রথম টুইটার কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিলো।

নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে @TeamTrump নামক ট্রাম্পের প্রচারণা অ্যাকাউন্টটিও বন্ধ করা হয়েছে শোনা যাচ্ছে।

পরে শুক্রবারই সরকারি অ্যাকাউন্ট @POTUS থেকে টুইট করেন ট্রাম্প: ‘আমরা চুপ থাকব না!’ এবং ‘টুইটার বাকস্বাধীনতা প্রকাশের জায়গা নয়’। এখানে তার ৩ কোটি ৩৪ লাখ ফলোয়ার রয়েছেন।

ট্রাম্প আরও জানান, তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছেন। অবশ্য টুইটার ওই পোস্টগুলোও সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলে।

ক্যাপিটলের দাঙ্গার ঘটনায় পাঁচজন মারা গেছেন। ফলে  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলো  ট্রাম্পসহ আরও অনেক ডানপন্থী সমর্থকের অ্যাকাউন্ট ও পোস্টের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত বছরের ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট  নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ট্রাম্প একের পর টুইটবার্তায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গেছেন। বুধবারও তিনি নির্বাচন ফলাফল নিয়ে প্রতিবাদের উদ্দেশে ক্যাপিটলে যেতে তার সমর্থকদের আহ্বান জানান।

এর আগে, সপ্তাহের শুরুতেই আরেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘোষণা দেয়, প্রেসিডেন্ট মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারাও ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে রাখবে।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা রয়েছে।

বলে রাখা ভালো, বুধবারই ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার ঘটনার পর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে ব্লক করার পাশাপাশি টুইটার সতর্ক করে দেয়, প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট থেকে বিদ্বেষমূলক কিছু ছড়ালে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

অ্যাকাউন্ট ‘আনব্লক’ করতে ট্রাম্পের নীতিমালা ভঙ্গকারী তিনটি টুইট মুছে ফেলার প্রয়োজন ছিল বলেও জানায় টুইটার।

বৃহস্পতিবার টুইটারে ফিরে ট্রাম্প একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি স্বীকার করে নেন, বাইডেনই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প থাকছেন না- এমন টুইটের পর এটি ট্রাম্প সমর্থকদের মাঝে নভেম্বরের নির্বাচন বৈধ ছিল না, এমন ধারণাকে জোরাল করে তোলে।

আরেকটি টুইটে ট্রাম্প সমর্থকদের ‘আমেরিকার দেশপ্রেমিক’ হিসেবে প্রশংসা করে লেখা হয়, ‘কোনোভাবেই তাদের অসম্মান করা কিংবা তাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হবে না।’

সত্যি সত্যিই ট্রাম্প সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে অংশ নেবেন কি না, এ ধরনের টুইট থেকে সে সংশয়ও জেগে ওঠে।

শীর্ষ ডেমোক্র্যাটিক নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ঘিরে টুইটারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা বলেন, এটা আরও আগেই করা উচিত ছিল। অন্যদিকে, এ ঘটনায় ট্রাম্প সমর্থকেরা রাগে ফেটে পড়েন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র টুইটে এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে লেখেন, গণহত্যার হুমকি দেওয়া অনেক স্বৈরশাসকের টুইটার অ্যাকাউন্ট এখনো পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে।

ট্রাম্প জুনিয়র অবশ্য কারও নাম উল্লেখ করেননি।

এদিকে, এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশের প্রেসিডেন্টকে এভাবে ‘চুপ করিয়ে’ দেওয়ায় টুইটারে ট্রাম্পের প্রচারণা অ্যাকাউন্ট থেকে সমালোচনা করা হয়েছে।

@POTUS অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ট্রাম্প জানান, তিনি তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করবেন।

লুটতরাজ ও গোলাগুলি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বহুল ব্যবহার ২০১৬ সালে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রবেশ ত্বরান্বিত করে। নিজস্ব @realDonaldTrump অ্যাকাউন্টটি থেকে কখনো কখনো তিনি দিনে ১০০ বারেরও বেশি টুইট করেছেন। সমর্থকদের কাছে পৌঁছাতে, ভুল তথ্য ছড়াতে, এমনকি কর্মচারিদের চাকরিচ্যুত করতেও তিনি ওই অ্যাকাউন্ট হরদম ব্যবহার করেছেন।

২০১৭ সালে ফক্স বিজনেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, সামাজিক মাধ্যম না থাকলে আমি এখানে আজ থাকতাম কি না, সন্দেহ।’

টুইটার ও ফেসবুক বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পকে বিশ্বনেতা হিসেবে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। কোম্পানির নীতি লঙ্ঘন করার পরও জনস্বার্থে অনেক টুইট সরানো হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট অফিস ত্যাগের পর তিনি এসব সুবিধা হারাবেন বলে কোম্পানি দুটি আগেই জানিয়েছিল।

নিয়মনীতি ভঙ্গের অভিযোগে টুইটার ট্রাম্পের বিভিন্ন টুইট নিয়ে গত বছর থেকেই সতর্ক করা শুরু করে। বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকর তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে তাদের যে নিয়মনীতি রয়েছে, ট্রাম্পের টুইট তা ভঙ্গ করায় বিভিন্ন সময় তাতে সতর্কতামূলক লেবেল লাগিয়ে দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের মার্চে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের একটি টুইটে ‘যখন লুটতরাজ শুরু হলো, তখনই গোলাগুলিও শুরু হলো’- এমন শব্দচয়নের ব্যবহারের পর সেখানেও টুইটার সতর্কতামূলক লেবেল জুড়ে দেয়।

যদিও @WhiteHouse and @POTUS শীর্ষক দুটি সরকারি টুইটার অ্যাকাউন্টে ট্রাম্পের এখনো প্রবেশাধিকার রয়েছে, কিন্তু ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলে তিনি সেগুলোও হারাবেন।

নতুন করে ট্রাম্প অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে টুইটারের এক মুখপাত্র জানান, শুক্রবারের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে একই কারণে যদি ট্রাম্প তার নতুন অ্যাকাউন্টেরও ব্যবহার করেন, তাহলে কোম্পানি নিজস্ব নীতি অনুযায়ী সেটিও স্থগিত করে দিতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

আরো সংবাদ