স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

সুবিধাভোগীদের টাকায় চসিককে স্বাবলম্বী করার প্রস্তাব সুজনের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে নগরের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে আয়ের ১ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ নেবার প্রস্তাব দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

তিনি মনে করেন, প্রডাক্টিভ পোর্টের জন্য গতিশীল শহর দরকার। পোর্ট ডিউস থেকে ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ আদায় করা গেলে ৭-৮শ’ কোটি টাকা আয় হবে চসিকের। এভাবে কাস্টম হাউজের রাজস্ব থেকেও ১ শতাংশ দিতে হবে চসিককে। এসব প্রস্তাবনা নিয়ে নতুন মেয়রকে চিঠিও পাঠাবেন সদ্য সাবেক প্রশাসক সুজন।

বৃ্হস্পতিবার দুপুরে নগরের জামালখান সিনিয়র্স ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

চসিকের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, এই শহরের সবচেয়ে সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস যে উপার্জন করছে তাতে এই শহরের বাসিন্দাদের, সেই সাথে সিটি করপোরেশনের হক আছে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার তথা ভারি যানবাহন চলাচলের কারণে শহরের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিন পর পর যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়। আর তা মেরামত করতে হয় সিটি করপোরেশনকে।

‘সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ মাসিক ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে যেখানে সিটি করপোরেশন দেনাগ্রস্থ সেখানে বাহ্যিক সহযোগিতা ছাড়া উন্নয়ন-কাজ পরিচালনা করা কঠিন। তাই চট্টগ্রাম বন্দর যে ট্যাক্স দিচ্ছে তার বাইরে তাদের উপার্জিত অর্থের মাত্র ১ শতাংশ চসিককে দিলে সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই চসিক স্বাবলম্বী হবে এবং চট্টগ্রামের যথার্থ উন্নয়ন এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে।’

সিটি করপোরেশন পরিচালনায় দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘সীমাবদ্ধতা, আর্থিক সংকটের মধ্যেও নিজের সর্বোচ্চ, সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি নগরবাসীকে সেবা দিতে। করপোরেশনের কাজে গতিশীলতা আনতে, দুর্নীতি রোধে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হয়েছে। বদলি করেছি, সাসপেন্ড করেছি সবই করপোরেশনের স্বার্থে। করপোরেশনের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণের চেষ্টা করেছি।’

চসিকের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক বলেন, চসিকের সম্পত্তি পাবলিক প্রপার্টি। দিনের ১২টায়ও অনেকে অফিসে আসে না। আমি সোয়া ৯টায় গেট বন্ধ করে দিয়েছি তিন দিন। চসিকে দক্ষ জনবলের অভাব। নিয়োগের নিয়ম বালাই নেই। দক্ষ জনবল চসিকের বড় সম্পদ। পৌরসভা চসিক হয়েছে। মানসিকতা পৌরসভার। পরিচ্ছন্ন বিভাগে অতিরিক্ত জনবল আছে। সবসময় কাজে নেই, হাজিরা আছে। কিছু ভিক্ষুককে সাবেক মেয়র মনজুর আলম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় এ ধরনের চাকরি দিয়েছিলেন। এক মাস পর থেকে তারা ভিক্ষা নিতে শুরু করে। 

তিনি বলেন, ১৮ কোটি টাকা বেতন। মার্চ থেকে ১৯ কোটি টাকা হবে। জ্বালানি ও গ্যাসে তিন-সাড়ে তিন কোটি টাকা খরচ। আমার ডাকে পৌরকর বাড়াতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন, আমি কৃতজ্ঞ। হোল্ডিং ট্যাক্সের জন্য আপিল বোর্ড বানিয়ে দিয়েছিলাম। আমি বলেছি যা দিতে চায় নিয়ে নেন। হোল্ডিং ট্যাক্স অটোমেশনে আনতে পারলে আরও বেশি আদায় করতে পারতাম। চট্টগ্রামের মানুষ লাইনে দাঁড়াতে চান না। অনেক কর কর্মকর্তাকে বদলি করেছি, অডিট করিয়েছি। অনেক ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করে চসিকের বালামে তুলেনি। ব্যবস্থা নিতে কমিটি করে দিয়েছি।

করপোরশনের ডোর টু ডোর বর্জ্য অপসারণে অনিয়ম ও অর্থ অপচয়ের কথা উল্লেখ করে সুজন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বললাম, বর্জ্যব্যবস্থাপনায় কারা কাজ করছে আমি তাদের দেখতে চাই। খোঁজ নিয়ে দেখলাম, তারা সবাই ভিক্ষুক। কারো পা নেই, কারো হাত নেই। তাদেরকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে তৎকালীন মেয়র মনজুর আলম এই কাজে তাদের যুক্ত করেছিলেন। প্রথম একমাস এই কাজ করলেও পরে তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছেন, কিন্তু করপোরেশন থেকেও নিয়মিত টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা কখনো চলতে পারে না।’

‌‌‌‘আমার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পিসি রোড, যেটি খালের ভিতর ছিল। এখানে অর্থের অভাব ছিল না। দুইজন ঠিকাদার ছিল অদক্ষ, এরমধ্যে একজন জিকে শামিমের পার্টনার। আমি কুমিল্লা থেকে আনালাম। বললাম, কাজ শেষ না করে ফিরতে পারবে না। তার অনেক পাওনাদার ছিল।  মানুষের কষ্ট আমি দেখেছি, দুঃসহ অবস্থা। সড়কের পূর্ব অংশ কমপ্লিট করেছি। ছয় মাস যুদ্ধ করেছি। এলাকার অনেকের ভালোবাসা পেয়েছি, অনেকের গালমন্দ শুনেছি। গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমার চিরকাল মনে থাকবে।’

‘রাস্তাঘাট পরোটা নয়, ধুম করে বানিয়ে খেয়ে ফেলা যাবে। স্ট্যান্ড রোডের কাজ ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে। করোনায় ঠিকাদার মারা যাওয়ায় কাজে ধীরগতি হয়ে পড়েছিল। চসিক তদারকি করলে মার্চের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী হবে বলে আশা খোরশেদ আলম সুজনের।

সুজন বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য যেমন প্রস্তুত তেমনি রাষ্ট্রীয়, সামাজিক কাজের জন্য প্রস্তুত। অনেকবার সংসদ সদস্য ও মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। বিবেচিত হইনি। ছয় মাস সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারি দিতে চেষ্টা করেছি। সিটি করপোরেশন আমার জন্য নতুন কিছু নয়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে ১৭ বছর কাছাকাছি ছিলাম। উনাকে দেখে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছিল।  

চসিকের শিক্ষাব্যবস্থায় অর্থের অপচয় হচ্ছে জানিয়ে সুজন বলেন, ‘কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে ৭০ জন। শিক্ষক আছে ৩৫ জন। সরকারের ষষ্ঠ গ্রেডের একজন শিক্ষকের চেয়েও এখানকার কোনো কোনো শিক্ষকের বেতন বেশি। সরকার যেখানে শিক্ষার জন্য নানা প্রণোদনা দিচ্ছে, ভবন করে দিচ্ছে বেতন বাড়িয়ে দিচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু সরকারকে দিয়ে দেওয়া যায়। সেটা যদি হয়, তাহলে খরচটা যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গতিশীল হবে।’

এক্ষেত্রে প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যন্ত চসিকের কাছে রেখে, কলেজগুলো সরকারকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন সুজন। চসিকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা উল্লেখ করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, স্বাস্থ্যখাতকে দয়া করে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যে পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন অন্তত সে জায়গায় নিয়ে আসুন।

আরো সংবাদ