গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়িতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসার খবরে গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ উচ্ছাস।
ধর্মীয় রীতিতে মোদিকে বরণ করতে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন গ্রামবাসীরা। মতুয়া ভক্তরা ঠাকুরবাড়ি ও মন্দিরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ধোয়া মোছার কাজ চলছে।
বাংলাদেশ মতুঁয়া মহাসংঘের মহাসংঘাতিপতি (সভাপতি) সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের এই ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এটা শুধু ঠাকুরবাড়ির গর্বের বিষয় নয়, সমস্ত মতুঁয়া ভক্তদের কাছে গর্বের। তিনি আসলে আমরা হিন্দু ধর্মীও মতে উলুধ্বনী, শঙ্খ ধ্বনী, ফুল ছিটানো এবং ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানাবো। ইতোমধ্যে তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেছেন ।প্রতিদিন সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের আনাগোনাও লক্ষ্যনীয়। ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর জানিয়েছেন, সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রায় প্রতিদিনই ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে আসছেন এবং নানান ধরনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, জানতে পেরেছি নরেন্দ্র মোদি হেলিকপ্টার যোগে ঠাকুরবাড়ি দক্ষিণ পাশে মাঠে নামবেন। পরে ঠাকুর বাড়িতে অবস্থিত হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে তিনি পূঁজা করে মন্দিরের সামনেই ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং বাড়ির সামনেই আরেকটি মাঠে ৩ শতাধিক নির্ধারিত মঁতুয়া নেতাদের সাথে মত বিনিময় করার কথা রয়েছে। তবে সরকারি ভাবে কোন নির্দেশনা বা পত্র পাইনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
পরের দিন ২৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি পত্র পেয়েছি। পত্রে জানানো হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি সৌধে ও কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি গ্রামে হরিচাঁদ ঠাকুরের বাড়ি সফর করবেন। তবে এখন পর্যন্ত সফরের কোন কর্মসূচী পাওয়া যায়নি। কর্মসূচী পেলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাবেন। সেদিনই তার দুই জেলায় দুই মন্দিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
“উনি প্রথমে যাবেন সাতক্ষীরা যশোরেশ্বরী মন্দিরে, ওটাতে যাবেন। এটা অনেক পুরোনো মন্দির প্রতাপাদিত্য কিংবা লক্ষণ সেনের সময়ের মন্দির।”
সাতক্ষীরা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে যাবেন মোদী, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানাবেন।
এরপর সেখান থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দিতে যাবেন জানিয়ে মোমেন বলেন, “ওদের ওখান থেকে সেদিনই ঢাকায় এসে তিনি দেশে ফিরে যাবেন।”
সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থ হিসেবে বিবেচিত। আর মতুয়া মতবাদের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান হল গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার ওড়াকান্দি। ওই গ্রামের মন্দিরটি পরিচিত মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার তীর্থস্থান হিসেবে।