স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আজ জানা যাবে পশ্চিমবঙ্গ কার ?

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের আরও চার রাজ্য- আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা ও পুদুচেরিতে ভোটের ফল ঘোষণা আজ। কিন্তু পশ্চিমবাংলার মতো নজরে নেই কেউ। পড়শি আসাম তো বটেই, দক্ষিণের কেরালা, পুদুচেরিও তাকিয়ে নীলবাড়ির লড়াইয়ের চূড়ান্ত ফল জানার জন্য।

আরও সহজ করলে— গোটা ভারত জানতে চায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তৃতীয়বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন? নাকি বাংলার মানুষ রাজ্য তুলে দেবেন নরেন্দ্র মোদীর হাতে। মমতার ‘পরিবর্তন’-এর ১০ বছর পর কি এবার বিজেপি-র ‘আসল পরিবর্তন’? না কি ২০০ আসন জেতার রণহুঙ্কার দিয়েও শেষ পর্যন্ত মমতার কাছে গোল খাবেন মোদী-শাহ?

পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল নিঃসন্দেহে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও মহা গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি-র অশ্বমেধের ঘোড়ার জয়যাত্রা রুখে মমতা আবার বাংলা দখল করলে জাতীয় রাজনীতিতে তিনিই বিজেপি-বিরোধী জোটের প্রধান মুখ হয়ে উঠবেন। আবার অমিতের ভবিষ্যদ্বাণী মেনে বিজেপি বাংলায় জিতলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবির আরও শক্তিশালী হয়ে অবতীর্ণ হবে। দলে অন্দরে গুরুত্বের নিরিখে আরও কয়েক কদম এগিয়ে যাবেন অমিত নিজেও।

বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে সরাসরিই লড়াই হচ্ছে মমতা বনাম মোদীর। বিজেপি-র মুখ তিনিই। সেনাপতি অমিত। বাংলা দখলের লড়াইয়ে রাজ্যে পর পর জনসভা করেছেন মোদী। করোনা সংক্রমণ না বাড়লে যা আরও বাড়ত। শেষ দু’টি সভা বাতিল হলেও ভার্চুয়াল মাধ্যমে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর অমিত শাহ তো পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় ঘরবাড়ি করে ফেলেছিলেন। ৬ এপ্রিল আসামের ভোট শেষ হওয়ার পরে আরও বেশি করে ‘বাংলামুখী’ হয়ে পড়েন মোদী-শাহ। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল- পাঁচ মাসে গোটা ৫০ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জেপি নড্ডাও।

প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি এই রাজ্যে মাত্র তিনটি আসনে জয় পেয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সেই বিজেপি-ই ১৮টি আসন দখল করে। তখন থেকেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ‘উনিশে হাফ, একুশে সাফ’ স্লোগান তুলতে শুরু করেন।

তবে তার আগে-পরে দলবদলের কারণে নীলবাড়ি দখলের চূড়ান্ত লড়াইয়ের মধ্যেই বিধানসভা ও লোকসভায় বিজেপি-র পাল্লা ভারী হয়ে যায়। লোকসভা নির্বাচনের আগেই মুকুল রায়কে দলে টেনে তৃণমূলে বড় ভাঙন ধরিয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দল বদলানোদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলো কেড়ে নেন শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দুর দলবদল নীলবাড়ির লড়াইয়ে নতুন মোচড় এনে দিয়েছে। কারণ, তার পরেই মমতা জানিয়ে দেন, তিনি প্রার্থী হবেন নন্দীগ্রামে। সেই দিনই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মাননীয়াকে হাফ লাখ ভোটে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ তার পর থেকেই সারা দেশের নজরে চলে আসে নন্দীগ্রাম। ভোটগণনার অপেক্ষার মধ্যেও নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল রয়েছে তৃণমূলের ‘আন্দোলনভূমি’ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে।

নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনে আরও বড় এক বদল এনে দিয়েছিল। সেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পায়ে চোট পান মমতা। সেই দুর্ঘটনার পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে খানিকটা সুস্থ হয়ে বেরোনর পর থেকেই তিনি বাকি প্রচারপর্ব সেরেছেন হুইলচেয়ারে বসে। প্রচারে নতুন ছবির জন্ম হয় বাংলায়। গোটা প্রচার পর্বে বাংলার এ মাথা থেকে ও মাথা, মঞ্চ থেকে রাস্তা— সর্বত্র হুইলচেয়ারে বসেই প্রচার করেছেন মমতা।

নীলবাড়ির লড়াই তৃণমূলের প্রচারে দলের ‘দ্বিতীয় মুখ’ হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অন্যদিকে, ‘ভাইপো’ আক্রমণে সুর চড়িয়েছেন মোদী-শাহ থেকে দিলীপ-শুভেন্দুরা।

বিধানসভা ভোটের প্রচারে বাংলার রাজনীতি পেয়েছে ‘খেলা হবে’ শব্দযুগল। আরও একটি বিষয় এবার নতুন পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি— পেশাদার ভোটকুশলী। প্রশান্ত কিশোর ও তার টিম প্রতিটি ধাপে নির্বাচন পরিচালনা করেছে পশ্চিমবঙ্গে।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে নীলবাড়ির লড়াইয়ে প্রাধান্য পেয়েছে কোচবিহারের শীতলখুচিতে একই দিনে পাঁচজনের মৃত্যু। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় দুষ্কৃতীর গুলিতে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় চার জনের। ওই ঘটনার পর মমতা থেকে দিলীপ-সহ তৃণমূল এবং বিজেপি-র অনেক নেতার প্রচারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন।

অনেকের কথায়, এবারের মতো ‘খোলাখুলি’ মেরুকরণের রাজনীতিও অতীতে দেখেনি রাজ্য। এই পশ্চিমবঙ্গই জন্ম দিয়েছে আব্বাস সিদ্দিকির নতুন দল আইএসএফ-এর। এই নির্বাচনই জন্ম দিয়েছে বাম-কংগ্রেস-ভাইজান জোটের।

তবে নীলবাড়ির লড়াইয়ের শেষ ভাগে থাবা বসিয়েছে করোনা। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে প্রার্থীর মৃত্যুতে পিছিয়েছে ভোট। নির্বাচনে লড়ে ফল জানার আগেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহের। আক্রান্ত আরও অনেক প্রার্থী। যাঁরা ভোট গণনার সময়েও ঘরবন্দি কিংবা হাসপাতালে।

ক্রমবর্ধমান আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ। তবু খেলা শেষের বাঁশি বাজার জন্য অপেক্ষমান বাঙালি জানতে চায়— কে? কার হাতে তাদের আগামী পাঁচটা বছর। সূত্র-আনন্দবাজার।

আরো সংবাদ