স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ব্লুমবার্গ-এ বাংলাদেশের প্রশংসা ভারতীয় অর্থনীতিবিদের

১৯৭২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বাংলাদেশ আজ মাথাপিছু আয়ে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সাফল্যগাথা গোটা বিশ্বের জন্য চমক। বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে দেখছে উন্নয়নশীল দেশগুলো।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এই অবস্থান ও অগ্রগতির দ্রুতগামিতা নিয়ে বিভিন্ন বিদেশি সংবাদমাধ্যমে চলছে আলোচনা ও চর্চা। ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (১ জুন) ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট মিহির শর্মা একটি কলামে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশ ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে ওঠা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন তিনি। সেখানে তিনি মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতকে গরিব বলে উল্লেখ করেছেন।
‘সাউথ এশিয়া শুড পে অ্যাটেনশন টু ইটস স্ট্যান্ডআউট স্টার’ শিরোনামের সেই লেখায় বাংলাদেশ বন্দনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মিহির শর্মা দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো এবং প্রতিষ্ঠানটির অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি কর্মসূচির প্রধান। তিনি ‘রিস্টার্ট: দ্য লাস্ট চান্স ফর দ্য ইন্ডিয়ান ইকোনমিক’ বইয়ের লেখক এবং ‘হোয়াট দ্য ইকোনমি নিডস নাউ’ বইয়ের সহ-সম্পাদক।

ব্লুমবার্গে ছাপানো সেই লেখাটির সারাংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালের মার্চে তুলনামূলক ধনী ও অধিক শক্তিশালী পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)। দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের মধ্যে জন্ম নেয় দেশটি; লাখ লাখ মানুষ ভারতে পালিয়ে যান বা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে শহীদ হন। পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়া মার্কিনিদের কাছে মনে হয়েছিল নতুন জন্ম নেওয়া এই দেশ ব্যর্থ হবে। সেজন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

এরপর ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ই যে আজ অর্থনীতিতে শক্তিশালী দেশে পরিণত হতে চলেছে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে পাকিস্তান-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করেন মিহির শর্ম।

তিনি লেখেন, চলতি মাসে বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বছর দেশটির মাথাপিছু জিডিপি ৯ শতাংশের বেশি বেড়ে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বর্তমানে এক হাজার ৫৪৩ ডলার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের তুলনায় পাকিস্তান ৭০ ভাগ ধনী ছিল; আর আজ বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ৪৫ ভাগ ধনী। এ কারণে এক পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি বিষণ্ন মুখে বলেছেন, ‘২০৩০ সালে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সাহায্য চাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।
শুধু পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে নিজ দেশ ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও তুলনা করেছেন মিহির শর্মা।

তিনি লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি থাকা নিয়ে চিরকালই আত্মবিশ্বাসী ছিল ভারত। কিন্তু এখন মানতেই হচ্ছে যে, তারা মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশের তুলনায় গরিব। ২০২০-২১ সালে ভারতের মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। বাংলাদেশের এই সাফল্যকে ভারত স্বীকৃতি দেবে ভেবে নিজেদের দম বন্ধ করবেন না। ভারতের জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিরা মনে করেন, বাংলাদেশ এতই নিঃস্ব যে দেশটি থেকে অবৈধ অভিবাসীরা দলে দলে সীমান্ত পার হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, ভারতের এসব হতাশাগ্রস্ত রাজ্যের চেয়ে বাংলাদেশ অনেক বেশি ধনী।

বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতীয় রাজ্যগুলোতে যেখানে হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা এখনো বাংলাদেশিদের ‘উঁইপোকা’ বলে সুর চড়াচ্ছেন, সেগুলোর তুলনায় অনেক বেশি ধনী বাংলাদেশ। বিষয়টি এমন যেন- কানাডা থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে মিসিসিপি।
এরপর বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতির পেছনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করেন মিহির শর্মা।

তার মতে, বাংলাদেশের অগ্রগতির তিনটি ভিত্তি রয়েছে: রফতানি, সামাজিক অগ্রগতি ও রাজস্ব নীতি। বিশ্বের ০.৪ শতাংশের তুলনায় ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রফতানি বেড়েছে প্রতিবছর ৮.৬ শতাংশ। এই সাফল্য এসেছে মূলত তুলনামূলক সুবিধা থাকা পোশাকের মতো পণ্যে নিরলস মনোনিবেশ ধরে রাখায়।

ভারত ও পাকিস্তানে কমলেও শ্রম শক্তিতে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বজায় রেখেছে। মহামারির পর ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেই সরকারি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৯০ শতাংশের কাছে গিয়ে পৌঁছেছে। ব্যয় সংকোচনের কারণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত আরও বেশি ঋণ ও বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছে।

আরো সংবাদ