স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ৫জি

১৬ ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে ৫জি নেটওয়ার্ক বদলে যাবে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, শিল্প ও নগরজীবন । টুজি’র (দ্বিতীয় প্রজন্ম) পর থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্ম) ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করেই বদলে যায় প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রা। পরবর্তীতে ফোরজি (চতুর্থ প্রজন্ম) এসে গতিশীল করেছে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রেই লেগেছে এর ছোয়া। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে এবার বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে ৫জি (পঞ্চম প্রজন্ম) সেবা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে এই সেবা। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিকম কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে ৫জি। পরবর্তীতে অন্যান্য অপারেটররা এই সেবা চালু করবে। তিনি জানান, ডিসেম্বরে দুটি বিশেষ দিবস রয়েছে- ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এই দুই দিনের যেকোন একটিতে ৫জি’র যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার টেলিযোগাযোগ ও প্রযুক্তি সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-টিআরএনবি আয়োজিত ‘ফাইভজি: ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড আপকামিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এই তথ্য জানান।

টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে অন্য মুঠোফোন অপারেটরদের জন্য ৫জি তরঙ্গ নিলাম করা হবে। ফলে আগামী বছর অন্যান্য অপারেটরও ৫জি চালু করতে পারবে। অবশ্য খুব দ্রুতই সারা দেশে ৫জি ছড়িয়ে দেওয়া হবে, বিষয়টি তেমন নয়। ৫জি সেবা বেশি কাজে লাগবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানায়। সেদিকেই নজর বেশি থাকবে। পাঁচটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল শিল্পকারখানায় ৫-জি সেবা দেওয়ার জন্য বিটিসিএলকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।মন্ত্রী আরও বলেন, ফাইভ-জি ডিভাইসের সংকটের কথা বলা হচ্ছে। ফাইভ-জি পুরোপুরি চালুর আগেই দেশে ডিভাইস সংকট থাকবে না। এখনই বাংলাদেশে ফাইভ-জি স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। চাহিদার ৯০ শতাংশ ৪জি স্মার্টফোন এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দীন বলেন, ৫জি সেবা চালুর জন্য ইতোমধ্যে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী মুজিবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষেই এই সেবা চালু করতে। তিনি বলেন, প্রথমে ঢাকায় ২০০টি সাইটে এই সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। পরবর্তীতে যেখানে ফাইবার কোয়ালিটি ভালো হবে সেখানে এই সেবা সম্প্রসারণ করা হবে।

জানা গেছে, ৫জি সেবা দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটককে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিটি তাদের নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে ব্যয় করবে।
মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে বলা হয় ফাইভজি বা ৫জি। ৪জির তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট থেকে তথ্য ডাউনলোড-আপলোড করা যায় এই ৫জি সেবায়। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়ে থাকে ৫জি মোবাইল নেটওয়ার্কে। এর মাধ্যমে একই সঙ্গে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। এতে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি সহজ হয়ে যাবে প্রযুক্তিনির্ভর অনেক কাজ।

বলা হচ্ছে, ৫জি প্রযুক্তি মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা বদলে দেবে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আরও শক্তিশালী হবে। স্মার্ট সিটি বিনির্মাণ সহজ হবে। এর সঙ্গে যুক্ত থাকা রোবট পরিচালনা করা যাবে। বাড়বে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) প্রযুক্তির ব্যবহার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পানির মিটারের সাথে থাকা সেন্সরটি আরেকটি সেন্সরকে সতর্ক করে দেবে যখন খুব বেশি পানি ব্যবহৃত হবে, সরবরাহ বন্ধ করে দেবে, রিসোর্স ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াবে, কিংবা কোনো ড্রোন সেকেন্ডের ব্যবধানে যেকোনো কিছুকে গুলি করে ভূপাতিত করতে পারবে। এই ব্যবস্থায় সেন্সরগুলোর ডাটা স্থাপিত হবে ট্রাফিক লাইটে, ঘরে, অফিসে, থানায়, পাবলিক পার্কে। ফলে নগর ব্যবস্থাপনা হবে আরো সহজ।

এছাড়া বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ৫জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৫জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবার উন্নয়নের ফলে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসেও রোগী শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারবেন। চাইলে বিশ্বের খ্যাতনামা চিকিৎকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারবেন। দূর শিক্ষণ বা অনলাইন ক্লাসরুমের ফলে দূরগ্রাম বা প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে। ৫জি ডিজিটাল ডিভাইড বা প্রযুক্তিগত বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরো সংবাদ