স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

দফায় দফায় বেড়ে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলারে উঠেছে।এতে সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে তেলের দাম।বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দু দুটি ঝড়ের পর তেলের চাহিদা বাড়ছে।তবে সে তুলনায় সরবরাহ কম রয়েছে। ফলে পণ্যটির দাম বেড়েছে।আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, তেলের দাম আরো বাড়তে থাকলে সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। এতে আমাদের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদন- তিনটার ওপরই ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তারা।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তেলের দামকে ধরা হয় গ্লোবাল ইনফ্লেশনের মার্কার হিসেবে। ইতোমধ্যে আমরা কমোডিটি প্রাইজের একটি ঊর্ধ্বগতি আন্তর্জাতিক বাজারে দেখছি।তিনি বলেন, আমাদের এবারের পেট্রোলিয়াম আমদানিতে ইতোমধ্যে দামের একটি প্রভাব পড়েছে। গত বছর আমরা যে পেট্রোলিয়াম ৪০ ডলারে এনেছি, এবার সেই একই পণ্য ৮১ ডলারে আনতে হয়েছে। ইতোমধ্যে কন্টেইনার ভাড়াও প্রায় ৪০০ শতাংশ বেড়েছে। তেলের মূল্য বাড়ার কারণে এ দাম আরো বাড়তে পারে। এক কথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদের আমদানি খরচ বাড়বে এবং আমদানিকৃত মূল্যস্ফীতির শঙ্কা তৈরি করতে পারে।এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতোমধ্যে ইয়ার্ন ও কটনের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ভোক্তা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদন- তিনটার ওপরই ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে।জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। এ মহামারি ইতোমধ্যে সহনীয় হয়ে আসায় দেশে দেশে আবার সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতি পেতে শুরু করেছে।আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হওয়ার কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেক দিন পর আবার সেই লক্ষণ দেখা দিয়েছে।জানা গেছে, বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট চলছে। সব মিলিয়ে বিশ্ববাজারে এখন সরবরাহ কম থাকার পরিস্থিতিতে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সদস্য দেশগুলো সরবরাহ বাড়াতে চায়। তারা বেশ কিছুদিন ধরে সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।এছাড়া চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম আবাসন প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড গ্রুপ দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে- এমন খবরে এশিয়ার পুঁজিবাজারের পাশাপাশি তেলের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মূলত গত বছরের নভেম্বর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। এ বছরের জুন থেকে তেলের দাম বাড়ার যে প্রবণতা তা আরো বেড়ে যায়।২০১৮ সালের অক্টোবরের পর গত জুনে করোনার প্রকোপের মধ্যে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে।গত এক সপ্তাহে তেলের দামে বড় উত্থান হওয়ায় এখন অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলার স্পর্শ করেছে। এর মাধ্যমে ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর আবারো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলারে পৌঁছেছে। অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল ও হান্টিং অয়েলের দামও সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।

আরো সংবাদ