স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ইউএনডিপির সূচকে ২০২০ এ ২ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ

মানব উন্নয়ন সূচকে গত বছরের চেয়ে আরও ২ ধাপ এগিয়ে ১৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ইউএনডিপির এবারের সমীক্ষায় ৮টি দক্ষিণ এশীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

মানব উন্নয়ন সমীক্ষা ২০২০ এর  শিরোনাম ‘দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার: হিউম্যান ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড এনথ্রোপোসিন’। আন্তর্জাতিকভাবে উন্মোচনের ছয়দিন পর সোমবার (২১ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে তা প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৯০ সাল থেকে বাংলাদেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের মানব উন্নয়ন সূচকে ১৩৯ তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে তিন ধাপ ও ২০১৮ সালেেএক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল মধ্যম মানব উন্নয়ন গ্রুপের গড় স্কোরের চেয়ে ভালো। গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে ৬০.৪ শতাংশ। জন্মের সময় শিশুর আয়ুষ্কালের বয়স বেড়েছে ১৪.৪ বছর। প্রতিটা মানুষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার গড় সময় বেড়েছে ৩.৪ বছর। প্রত্যাশিত শিক্ষার সময় বেড়েছে ৬ বছর। এসময় বাংলাদেশের গড় আয় বেড়েছে ২২০.১ শতাংশ।

মানব উন্নয়ন সূচকের এবছরের প্রতিবেদনে আগের বছরের মতো শীর্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে নরওয়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড ও সুইজারল্যান্ড। এরপর রয়েছে, হংকং, আইসল্যান্ড, জার্মানি, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড ও ডেনমার্ক।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটান। এক ধাপ পিছিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭২তম হয়েছে। মালদ্বীপ ৯ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ভারত দুই ধাপ পিছিয়ে ১৩১তম ও পাঁচ ধাপ এগিয়ে ভুটান  আছে ১২৯তম অবস্থানে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের পেছনে আছে পাকিস্তান, নেপাল ও আফগানিস্তান। পাকিস্তান দুই ধাপ পিছিয়ে ১৫৪তম, নেপাল ৫ ধাপ এগিয়ে ১৪২তম এবং আফগানিস্তান এক ধাপ এগিয়ে ১৬৯তম অবস্থানে আছে।

১৯৯০ সাল থেকে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে মানব উন্নয়ন সূচক পরিমাপ করা হয়। তবে ৩০তম বার্ষীকিতে নতুন করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা এবং মোট ব্যবহৃত সম্পদের পরিমাণ যোগ করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচনের সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় সবসময় গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।

ইউএনডিপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারিতে এখনও পর্যন্ত ৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেলেও এর প্রভাব আরও বিস্তৃত ও প্রকট। বহু পরিবার জীবিকা হারিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। আয় অসমতা ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বেড়েছে। লেখাপড়া থেকে দীর্ঘবিরতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে।

মানব উন্নয়ন সূচকের প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, কোভিড-১৯ দেখিয়েছে যদি প্রকৃতির উপর মানুষ দখলদারিত্ব না থামে তবে এটাই শেষ মহামারি হবে না। নতুন এই পরিস্থিতি দেখিয়েছে একই সাথে মানুষ ও পৃথিবীর কল্যানের মাঝেই আছে সত্যিকার উন্নয়ন।

আন্তর্জাতিক উন্মোচনের সময় ইউএনডিপির প্রশাসক অ্যাচিম স্টেইনার বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীর ক্ষতি না করে এখন পর্যন্ত কেউ মানব উন্নয়ন করতে পারেনি। আমরাই হতে পারি এই ভুলকে সঠিক করার প্রথম প্রজন্ম।

আরো সংবাদ