স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বাংলাদেশেই তৈরি হবে স্বর্ণের বার

বাংলাদেশেই তৈরি হবে স্বর্ণের বার ও স্বর্ণ কয়েন। ফলে স্বর্ণের তৈরি অলংকার তৈরিতে আর বিদেশ থেকে বার ও কয়েন আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। এতে স্বর্ণ চোলাচালানও কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮’ সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে স্বর্ণবার উৎপাদন করা গেলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। একইসঙ্গে রপ্তানি করে বছরে দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় সম্ভব।

জানা গেছে, স্বর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮’ অনুমোদন পায়। পরে এটি কার্যকর হয়। এ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনের আলোকে স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালংকার আমদানি করার জন্য স্বর্ণ খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংককে অনুমোদিত সোনার ডিলার হিসেবে লাইসেন্স দেয়া হয়। এরই মধ্যে অনুমোদিত গোল্ড ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরও জানা যায়, স্বর্ণ নীতিমালায় স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক আমদানির বিষয়ে কিছু উল্লেখ্য ছিল না। অনেকেই অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানিপূর্বক নিজস্ব পরিশোধনাগারে পরিশোধন করে স্বর্ণবার ও স্বর্ণকয়েন উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ ‘গোল্ড রিফাইনারি প্লান্ট’ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা নীতিমালা সংশোধনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিদ্যমান ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮’ সংশোধন করে অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং পরিশোধনাগার স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে তা হালনাগাদ করার লক্ষ্যে সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে এখনও অপরিশোধিত বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ পরিশোধনে কোনো পরিশোধনাগার স্থাপিত হয়নি। অপরিশোধিত স্বর্ণ বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি ও পরিশোধন প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পরিশোধন করা সম্ভব হবে। এ যোগ্যতা বাংলাদেশ অর্জন করতে পারলে বিশ্ববাসীর কাছে দেশ নতুনভাবে উদ্ভাসিত হবে। পাশাপাশি বিশ্বের ‘গোল্ড রিফাইনারস’ দেশের তালিকাভুক্ত হবে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দেশে স্বর্ণবার বা স্বর্ণকয়েন উৎপাদন করা হলে অলংকার তৈরির যাবতীয় সোনা আর বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। শুধুু তা-ই নয়, উল্টো বাংলাদেশ সোনার বার বিদেশে রপ্তানি করতে সক্ষম হবে। এতে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে।

গতকাল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান শেয়ার বিজকে বলেন, স্বর্ণবার ও স্বর্ণকয়েন দেশে উৎপাদন করা গেলে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। একইসঙ্গে এসব স্বর্ণবার রপ্তানি করে সরকার বছরে দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হবে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বর্ণের ট্যাক্স ভরিপ্রতি ৫০০ টাকা করার দাবি করেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে স্বর্ণবার বা স্বর্ণকয়েন উৎপাদন করা হলেও চোরাচালান কমবে না। কারণ দেশে যত স্বর্ণ চোরাচালান ধরা পড়ছে, তা মূলত আশপাশের দেশে পাচার হওয়ার জন্য। বাংলাদেশকে চোরাকারবারিরা রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তবে স্বর্ণবার দেশে তৈরি হলে এসব স্বর্ণবার যাতে অবাধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা যায়, সে ক্ষেত্রে ট্যাক্স কমানোর বিকল্প নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

আরো সংবাদ