স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

কক্সবাজারের সাগরে রহস্যজনক বিস্ফোরণ, ৭ জেলের মৃত্যু

মেঘনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় নৌকা নিয়ে কক্সবাজার উপকূলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন জেলেরা। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ। কেবিন তছনছ হয়ে গেলো। সবাই লাফিয়ে পড়লো পানিতে। ২১ জেলে ও মাঝির মধ্যে কম বেশি সবাই আহত। তাদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এর মধ্যে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।

ট্রলারে ‘রহস্যজনক বিস্ফোরণে’র ঘটনাটি গেল ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘটলেও আলোচনায় এসেছে দীর্ঘ অর্ধমাস পর আজ (১৪ মার্চ) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে। ঘটনাটি নিয়ে জেলে ও ট্রলার মালিকদের মধ্যে কৌতুহল ছড়িয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।

নিহত ও আহত জেলেদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে। উপজেলা প্রশাসন ও জেলেদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সিরাজ উদ্দিনের ছেলে মিরাজ উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মিরাজ এবং মো. বেলাল উদ্দিন, মো. মেহেরাজ উদ্দিন, মো. রিপন মাঝি, আবুল কাশেম, মো. মিলনের।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘নিহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসন থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রলারে বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি এখনো।  জেলেদের মধ্যে যারা সুস্থ হয়ে এসেছে তারাও কিছু বলতে পারছে না। তাই বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজারে গিয়ে মামলা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত হলেই আসলে কী ঘটেছিল সেদিন, তা জানা যাবে।’

কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ অবশ্য বলছে, এখনো কোনো মামলা দায়ের করেনি কেউ। কোস্ট গার্ডের চট্টগ্রাম জোনের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, ঘটনাটি তাদেরকেও জানানো হয়নি।

দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারটির মালিক শহিদুল হক সোহেল বলেন, ‘এটি একটি রহস্যময় ঘটনা। কারণ ট্রলারের ইঞ্জিন, ব্যাটারি, গ্যাস সিলিন্ডার সব অক্ষত। হঠাৎ করে কিছু একটা এসে কেবিনে বিধ্বস্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়, যাতে সেখানে থাকা ১২ জন জেলে আহত হয়। শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাদের মধ্যে সাতজন মারা গেছে।’

ঘটনার সময় ট্রলারে থাকা জেলে মো. শরীফ জানান, মেঘনায় মাছ ধরা নিষেধ থাকায় তারা কক্সবাজার উপকূলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। ট্রলার নিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উপকূল থেকে রওনা দিয়েছিলেন। বাকখালী নদী পেরিয়ে আরও অন্তত ১০-১২ ঘণ্টা ট্রলার চালানোর পর রাত ৩টা থেকে সাগরে জাল ফেলার কাজ করে পরদিন সকাল ১০টা নাগাদ খাবার খান তারা।

জেলেদের প্রায় সবাই কেবিনের উপরের অংশে, ভেতরে ও বাইরে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। একজন কেবল নীচে বসে জাল পাহারা দিচ্ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ। কেবিন তছনছ হয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই সবাই লাফিয়ে পড়লেন পানিতে। যে একজন উপরে ছিলেন, তিনি রশি ফেললে একে একে সবাই উপরে উঠে আসে। কম বেশি সবাই আহত হয়।

বেশ কিছুক্ষণ পর কাছাকাছি এলাকা দিয়ে আরেকটি ফিশিং বোট যাচ্ছিল। তাদের অনুরোধ করা হলো মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে এমন এলাকায় এগিয়ে দিয়ে আসতে। মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার পর ট্রলারের মালিককে ঘটনা জানান আহত জেলেরা এবং তাদের দ্রুত উদ্ধারের অনুরোধ করেন।

মালিক শহিদুল হক সোহেল বলেন, ‘খবর পেয়েই আরেকটা বোট ও দুইটা স্পিড বোট ভাড়া করে তখনই রওনা দেই। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে এসে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আহতদের প্রথমে চট্টগ্রাম ও পরে কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো ঘটনা সেখানকার ফিশিং বোট মালিক সমিতিকে জানানো হয়েছে। তারপর থেকে একে একে কয়েকজন মারা গেল। ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন আরও চারজন।’

বিস্ফোরণ সম্পর্কে সোহেল বলেন, ‘ঘটনাটি কেন ঘটলো, সেটি এখনো বুঝলাম না। কারণ ট্রলারে ইঞ্জিন, গ্যাস সিলিন্ডার বা ব্যাটারি সব ঠিক আছে। মাঝি বা জেলেরাও কিছু বুঝতে পারেনি।’

মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা একটা মিরাকল। ট্রলারটি উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী ছিল। বিস্ফোরক কিছু এসে পাশ থেকে কেবিনে আছড়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। মাঝি ও জেলেরাই হতবাক যে, কী হয়ে গেলো। রহস্য উদঘাটনে ঘটনাটি তদন্ত হওয়া দরকার।’

আরো সংবাদ