স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

‘শিশুদের মারধর নয়, ভালো ব্যবহার করতে হবে’

বাসস : রওশন আক্তার সোমা সারাক্ষণই ব্যস্ত থাকেন তার দুই সন্তানকে সামলাতে। বড়টার বয়স সাড়ে চার বছর। আর ছোটটার বয়স আড়াই বছর। সারাক্ষণ দুষ্টুমির মধ্যেই থাকে দু’জন। আর কিছুক্ষণ পর পর শুধু কান্না করে। তাদের দু’জনকে সামলাতেই দিন চলে যায় সোমার।

এক বন্ধের দিনে দুই বাচ্চাকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান সোমা। সেই আত্মীয়েরও আছে তিনটি বাচ্চা। বড় জনের বয়স ১১ বছর। আর ছোট একজনের বয়স ছয়, আরেকজনের বয়স তিন বছর। সোমা ও সেই আত্মীয় দু’জন মিলে কথা বলতে থাকলে বাচ্চারা নিজেদের মত খেলতে থাকে। কিন্তু এক পর্যায়ে কান্নার আওয়াজ। গিয়ে দেখে সেই বাসায় সাইকেল আছে একটা। কিন্তু সবাই সেই সাইকেলে উঠবে। আর তাই নিয়ে বাচ্চাদের মধ্যে ঝগড়া আর কান্নাকাটি। এমন সমস্যার মুখোমুখি প্রায়ই সময়ই পড়তে হয় প্রত্যেক বাবা-মাকে।

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চাদের কোন অবস্থাতেই গায়ে হাত তোলা উচিত নয়। বাইরে বেড়াতে গেলে তো নয়ই। অন্যদের সামনে তাদের বকা দেওয়াও উচিত নয়। তাদেরকে সব-সময় বুঝিয়ে বলতে হবে। আদর করে বুঝিয়ে বললে শিশুরা তা বুঝতে পারে।

তাদের মতে, কোথায় বেড়াতে যাওয়ার আগে বাচ্চাদের বুঝিয়ে বলতে হবে। যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন, সেখানকার পরিবেশ কেমন, সেখানে কে কে থাকে, কী কী করা যাবে, আর কী কী করা যাবে না- এসব বিষয়গুলো তাদের বারবার করে বুঝিয়ে বলতে হবে।

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শহীদুল ইসলাম বলেন কোনভাবেই শিশুদের মারধর করা সমীচীন নয়। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ের সৃষ্টি হয়। যার ফলে তারা অনেক কিছু করতেই ভয় পায়। যা তার স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।

তিনি বলেন, শিশুদের বকা না দিয়ে তাদের যদি বারবার করে বুঝানো যায়, তবে তারা তা বুঝতে পারে। বেশিরভাগ সময়ই তারা বাবা-মা’র কথা শুনে। কিন্তু বকা অথবা মারধরের পর বেশিরভাগ শিশুর মধ্যে এক ধরনের জেদ চেপে বসে। তখন হয়ত ক্ষণিকের জন্য তারা ওই কাজ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু বাবা-মায়ের অগোচরে আবার করতে থাকে।

শহীদুল বলেন, সবচেয়ে ভালো হয় সন্তানকে বুঝিয়ে বলা। কোথায় যাচ্ছন, সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি কেমন এসব বিষয়ে বাচ্চাদের আগে থেকে ধারনা দিতে হবে। সেখানকার একটি প্রতিচ্ছবি বাচ্চাদের মনে যেন ভেসে উঠে সেভাবে বর্ণনা দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্রতিনিয়ত এসব বিষয়ে বাচ্চাদেরকে গল্পের ছলে বলা যায়। তাহলে শিশুদের মনে তা গেঁথে যায়।

তিনি বলেন, সন্তানদের সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে। তবে তাদের হাতে মোবাইল বা এ জাতীয় কোন ধরনের প্রযুক্তিগত যন্ত্র দেওয়া যাবেনা। শিশুরা যদি এতে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে তা শিশুদের জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে। আর শিশুরা যদি একবার এ সব মোবাইল অথবা ট্যাবে আসক্ত হয়ে পড়ে তবে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য।

তিনি বলেন, অনেক মায়েরা তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর সময় মোবাইল হাতে ধরিয়ে দেন। যাতে করে বাচ্চারা কার্টুন দেখে অথবা গান শুনতে শুনতে খায়। এটা কোনভাবে উচিত নয়। এতে করে বাচ্চারা যে খাবারটা গ্রহণ করছে তার কোন স্বাদ পায়না। তারা বুঝতে পারেনা যে তারা কী খাচ্ছে। এ সময় মায়েরা বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের কথা বলে অথবা গান শুনিয়ে খাওয়াতে পারেন। তবে তাদের হাতে মোবাইল দেওয়া উচিত নয়।

ডা. শহীদুল বলেন, বাচ্চাদের দিনে অন্তত একবার করে বাইরে নিয়ে গেলে তাদের মন ভালো থাকে। বাইরে গেলে তারা বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে ধারনা পায়। আর তাই প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসা উচিত।

আরো সংবাদ