স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

যেভাবে বুঝবেন আপনি অহংকারী

জীবন ধ্বংসকারী একটি মারাত্মক স্বভাব হলো অহংকার। এই স্বভাবের লোকেরা তাদের উন্নতি ও বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষদের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে তার প্রতিষ্ঠান, সমাজ, সংগঠন, রাষ্ট্র এমনকি নিজ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রাসুল (সা.) তিনটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে মানুষকে সাবধান করেছেন। সেগুলো হলো, প্রবৃত্তি পূজা লোভের দাস হওয়া এবং অহংকারী হওয়া। তিনি বলেন, এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক।(মিশকাত, হাদিস: ৫১২২)

এখানে অহংকারের কিছু নিদর্শন বর্ণনা করা হলো

শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করা

সবার কাছে নিজেকে শ্রেষ্ঠ করে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা, অন্যকে তুচ্ছ ভাবা ধ্বংসের কারণ।ইবলিস সর্বপ্রথম নিজেকে বড় মনে করেছিল। যার কারণে মহান আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। আদম (আ.)-কে সিজদা দেয়ার নির্দেশের বিরোধিতায় সে আল্লাহকে যুক্তি দেখিয়েছিল, ‘আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত :১২)। অতএব, ‘আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন?’ (সুরা: ইসরা, আয়াত : ৬১)

এই অহংকারের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ তাকে বলেন, ‘বের হয়ে যাও এখান থেকে। কেননা তুমি অভিশপ্ত।’ (সুরা : সোয়াদ, আয়াত : ৭৬)

সত্য প্রত্যাখ্যান করা

মানুষ কখনো কখনো নিজেকে শ্রেষ্ঠ করে চিত্রিত করার জন্য সত্যকে চাপা দেয়। অন্যের অবদানগুলো নিজের ব চালিয়ে দেয়। অন্যকে দাবিয়ে রাখতে বিভিন্ন জায়গায় তাকে তুচ্ছ করে চিত্রিত করে। এটাও মানুষকে ধ্বংস করে দেয়।রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, লোকেরা চায় যে তার পোশাক সুন্দর হোক। জবাবে তিনি বলেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সঙ্গে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯১)

নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবা

দুনিয়ার প্রত্যক মানুষ আল্লাহর দয়ায় চলে । কাউকেই আল্লাহ স্বয়ংসম্পূর্ণ করেননি। তাই যারা নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে অন্যকেঅবজ্ঞা করে তাদের ব্যাপারে রয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন করে। কারণ সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে।’ (সুরা : আলাক, আয়াত : ৬-৭)

হাঁটাচলার বড়ত্ব প্রকাশ করা

একবার উবাই ইবনু কাব (রা.) –এর পেছন পেছন একদল লোককে চলতে দেখে খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) তাঁকে চাবুক দিয় আঘাত করলেন। এতে চমকে উঠে তিনি জিঙ্গেস করলেন, ব্যাপার কী হে আমিরুল মুমিনিন! জবাবে খলিফা বলেন, ‘এটা অনুসরণকারীর জন্য লাঞ্ছনাকর এবং অনুসৃত ব্যক্তিকে ফিতনায় (অহংকারে) নিক্ষেপকারী।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩১২৪৪)

কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা

অর্থ-সম্পদ, সৌন্দর্যের কারণে অন্যের প্রতি অন্তরে কোনো তুচ্ছভাব উদ্রেক হওয়াটা অহংকারের লক্সণ। একদিন সাহাবি আবু জর গিফারি (রা.) হাবশি বেলাল (রা.)-কে তাঁর কালো মায়ের দিকে ইঙ্গিত করে তাচ্ছিল্য করলে রাসুল (সা.) তাঁকে ধমক দিয়ে বলেন,‘হে আবু জর! তুমি তাকে তার মায়ের নামে তাচ্ছিল্য করলে? তোমার মধ্যে জাহেলিয়াত রয়েছে।’ (বুধাবি, হাদিস : ৩০)

একইভাবে অধীনদের সঙ্গে বড় নিদর্শন । এর শাস্তি অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর। অন্যায়ভাবে কারো সম্মানহানি করলে কিয়ামতের দিন অহংকারী ব্যক্তিকে পিঁপড়াসদৃশ্য করে লাঞ্ছনাকর অবস্থায় হাঁটানো হবে। (তিরমিজি, হাদিস :২৪৯২)

অহেতুক জেদ করা

অনেকেই আছে নিজের ভুর কখনো স্বীকার করে না। নিজের ভুলগুলো অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়্ আবদুর রহমান বিন মাহদি (রহ.) বলেন, আমরা এক জানাজায় ছিলাম। সেখানে ওবাইদুল্লাহ বিন হাসান উপস্থিত ছিলেন, যিনি তখন রাজধানী বাগদাদের বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। আমি তাঁকে একটি মাসআলা জিঙ্গেস করলে তিনি ভুল জবাব দেন। তখন আমি প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমি লজ্জিত।’ অতঃপর বলেন, ‘ভুল

স্বীকার করে হকের লেজ হওয়া আমার আমার কাছে অধিক প্রিয় বাতিলের মাথা হওয়া চেয়ে।’ (তারিখু বাগদাদ : ১০/৩০৮)

আমাদের উচিত আল্লাহর জন্য এগুলো ত্যাগ করা। আল্লাহ আমাদের অহংকার থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করু।

আলহাজ্ব মাওলানা ফজুলল কবির চৌধুরী

লেখক ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ

প্রেসিডিয়াম সদস্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আত বাংলাদেশ এবং

সভাপতি, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ, দুবাই।

আরো সংবাদ