স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

২০২০: সেরা সাফল্য করোনার ভ্যাকসিন

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা ধরা পড়ে। এরপর গোটা বিশ্বে দ্রুত প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে তা মহামারী রূপ ধারণ করে। স্বভাবতই সময়ের দাবি হয়ে ওঠে ভ্যাকসিন। ইতিমধ্যে তা বিশ্ববাজারে এসেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন মর্ত্যের কোটি কোটি মানুষ।

কয়টি ভ্যাকসিন এসেছে?

গেল এক বছরে গোটা পৃথিবীকে ওলটপালট করে দিয়েছে করোনা। এ পরিস্থিতিতে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ভ্যাকসিনই। ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে এটি এসেছে একাধিক। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ফাইজার-বায়োটেক ও মডার্না, রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি, চীনের সিনোভ্যাক, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা টিকা এখন পাওয়া যাচ্ছে।

কতটি কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে?

যদিও আগত ভ্যাকসিনগুলো এখনও গরিব দেশগুলোর নাগালের বাইরে রয়েছে। ধনী দেশগুলোর গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। তবে স্বপ্ন দেখতে নিষেধ নেই। গরিব মানুষগুলো আশায় বুক বাঁধছেন-শিগগির পাবেন তারাও। সূচনাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, প্রায় ১০০টি কোম্পানি করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনের চেষ্টা করছে। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচটি সাফল্যের মুখ দেখেছে। এসবকে ঘিরেই আশার আলো দেখছেন দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ।

ভ্যাকসিন তৈরিতে হু’র গাইডলাইন কী?

ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। শুরুর দিকে একে পুরোপুরি কাল্পনিক মনে হচ্ছিল। কারণ, নোভেল করোনাভাইরাসের চরিত্র বুঝা যাচ্ছিল না। অধিকন্তু ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী সময় লাগে অন্তত ১০ বছর। তবে জরুরি ভিত্তিতে এক-দশমাংশ সময়ের মধ্যেই এসেছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। অতীতে এর চেয়ে চটজলদি কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। 

বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা কতটা?

যেভাবে প্রতিদিন মৃত্যুহারের গ্রাফ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, তাতে বিজ্ঞানীদের হাতে একেবারে সময় ছিল না। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তারা। পথিমধ্যে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। পরীক্ষার রদবদল ঘটাতে হয়েছে।

কত অর্থ খরচ হয়েছে?

বোঝাই যাচ্ছে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধন করতে হয়েছে গবেষকদের। ধারণার স্তর থেকে ভ্যাকসিনকে বাস্তবে পরিণত করতে বহু ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাদের। পাশাপাশি প্রচুর অর্থের জোগান এবং বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে দরকার ছিল রাসায়নিক দ্রব্য ও ল্যাবরেটরি। সবটাই জোগাড় হয়েছে। 

দাতব্য সংস্থাগুলোর অবদান কতটা?

শুরুতে ভ্যাকসিন গবেষণায় ব্যাপক অর্থের জোগান দেয় বিল গেটস ফাউন্ডেশন। পরে একে একে এগিয়ে আসে জ্যাক মা ফাউন্ডেশন, ওয়েলকাম ট্রাস্টসহ একাধিক সংস্থা।  বিভিন্ন ধনাঢ্য দেশগুলোও সহায়তা করে।

কোন কোন দেশে প্রয়োগ শুরু?

ইতিমধ্যে আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার বহু দেশে জনমানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সৌদি আরব, ইসরায়েল, কাতার, মেক্সিকো, সার্বিয়া, কুয়েত, চিলি, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা, হাঙ্গেরি, জার্মানি, স্লোভাকিয়া, ওমান, চেক রিপাবলিক, ইতালি ও সাইপ্রাস।

গরিব দেশগুলো কখন ভ্যাকসিন পাবে?

গরিব দেশগুলো কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবে-এটি নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না? এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, অবৈধভাবে টিকা মজুদ করছে ধনী দেশগুলো। প্রয়োজনের তুলনায় নিজেদের সরবরাহে বেশি রাখছে তারা। ফলে দরিদ্র দেশগুলো প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রতিষেধক থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।

তবে আশার বাণী শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলো। শিগগির দরিদ্র দেশগুলোয় ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু করবে তারা। সেজন্য ডব্লিউএইচও, জিএভিআই ভ্যাকসিন গ্রুপ ও কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে কোভ্যাক্স।

হালাল-হারাম বিতর্ক কেন?

জীবন বাঁচায় যেখানে প্রধান হয়ে গেছে, সেখানে হালাল-হারাম বিতর্ক উঠে গেছে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে শূকরের কিছু ব্যবহার করা হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন মুসলমানরা। এমনকি জবাই করা গরুর কোনো কিছু ব্যবহার করা হতে পারে। ইসলাম ধর্মে এই দুটিই নিষিদ্ধ অর্থাৎ হারাম। তবে এতে প্রাণি উৎসের কোনো উপাদান নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানিগুলো। একে সম্পূর্ণ হালাল দাবি করেছে তারা।

নতুন করোনায় ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কী?

এরই মাঝে চিন্তায় ফেলেছে নতুন করোনা। বিশ্বের ১৫টি দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক এটি। তাতে শিশুরাও ব্যাপক আক্রান্ত হতে পারে। ফলে গোটা বিশ্বের এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নয়া করোনার বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর হবে ভ্যাকসিন? জবাবে আশ্বস্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, মারণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুতগতির হলেও সেটার বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম ভ্যাকসিন। ফলে স্বপ্ন জিইয়েই থাকছে।

আরো সংবাদ