স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন : আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ শঙ্কা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দিন এগিয়ে আসার সাথে বাড়ছে উদ্বেগ শঙ্কা। প্রার্থীদের প্রচারণায় বাড়ছে হামলার ঘটনা। এতে প্রায় প্রতিদিন অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঘটনায় আহতও হচ্ছেন প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা। সরকারদলীয় প্রার্থীরা কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও বিপরীত চিত্র বিরোধী শিবিরে। বিশেষ করে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার মিছিলে হামলা হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে। সবগুলো ঘটনার জন্য বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে রেশারেশি সংঘর্ষের ঘটনাও বাড়ছে।

নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব ঘটনা এড়াতে নির্বাচনের কয়েক দিন আগেই কাজ শুরু করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। সংঘাত এড়াতে পুলিশের তৎপরতাও বেড়েছে। এরপরও সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হামলার ঘটনা। এতে ভোটারের মধ্যে ভীতিও যেন বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে নির্বাচনের আগে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।

এদিকে অভিযোগের পাহাড় জমছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থীরা একের পর এক অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাচ্ছেন। উৎসবমুখর নির্বাচন হয়ে উঠছে সংঘাতময়। প্রার্থীদের মধ্যে চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ। এরই মধ্যে গাড়িবহরে হামলা, পোস্টার ছেঁড়া, প্রচারণায় ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর প্রতিদিনই হচ্ছে। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন বিকালে নগরীর বাকলিয়ার বলিরহাট এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের মধ্যে ফাঁকা গুলিও চালানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আহতরা হলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সোহান এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ওয়াজেদ। অন্যদিকে বিএনপির আহতরা হলেন ছাত্রদল নেতা ইউনুস এবং নুরুদ্দিন। এছাড়া রাত ১২টার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার কাজির দেউড়িতে বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

চসিক নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি বলেন, নগরজুড়ে চেকপোস্ট ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ বিশেষ টহল চলবে। পুলিশের ‘মুভমেন্ট’ বাড়ানোর হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রচারণা শুরুর পর থেকে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। করোনার কারণে চসিক নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে গত বছরের ১৮ মার্চ রাতে সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকায় ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোরশেদ আকতার চৌধুরীর নির্বাচনি কার্যালয়ে খুন হন আনোয়ার জাহের তানভীর (৪৫) নামে একজন। ১২ জানুয়ারি পাঠানটুলিতে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক আজগর আলী বাবুল। গত শনিবার লালখান বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়। বাকলিয়ার বাস্তুহারা ও চান্দগাঁও থানার বারইপাড়া এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) দেওয়ান বাজার এলাকায় গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচনি প্রচারণার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশিকুর রহমান রোহিত (২০) নামের এক ছাত্রলীগের কর্মী মারা গেছেন। গত ১৭ জানুয়ারি চকবাজার রাহাত্তারপুল এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের গণসংযোগে নগর ছাত্রদলের দুই গ্রুপে হাতাহাতি হয়েছে। এতে নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরীফুল ইসলাম তুহিন হেনস্থার শিকার হন। সংঘর্ষ হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিতদের মধ্যে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ১৪টি ওয়ার্ড সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এগুলো হলো: ১ নম্বর পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৯ নম্বর পাহাড়তলী, ১০ নম্বর কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ২৩ নম্বর পাঠানটুলি, ২৭ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৮ নম্বর মোগলটুলি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ী, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার এবং ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড। নির্বাচনে এসব ওয়ার্ডে সহিংসতা বাড়তে পারে। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। এ অবস্থায় সাধারণ ভোটাররা বুঝতে পারছেন না, তারা ভোট দিতে যাবেন কি না। গেলেও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না।

তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এটা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জের। তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। আমরা অবশ্যই পেশাদারত্বের সাথে কাজ করব। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতা সৃষ্টিকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, হোক সে বহিরাগত কিংবা স্থানীয়। তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সংঘর্ষের আশঙ্কা আছে, সেসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহল টিম কাজ করছে। নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। নির্বাচনি লড়াইয়ে বেশ ক’জন অভিযুক্তের পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী প্রার্থী হওয়ায় এ শঙ্কা আরও বাড়ছে। মূলত কাউন্সিলর পদ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিভক্ত আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দলটির নেতাকর্মীদের উদ্বিগ্ন করছে। সম্প্রতি পুলিশের অভ্যন্তরীণ একটি প্রতিবেদনেও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে কোন্দল এবং দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। সবকিছু ভোটারদের মনে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। বহিরাগতদের এনে নগরীতে সহিংসতা ঘটানোর চেষ্টা সম্পর্কে সিএমপি কমিশনার বলেন, একটি এলাকায় বিশেষ জেলার বাসিন্দাদের আধিক্য থাকতে পারে, এটা এক বিষয়।

আরো সংবাদ