স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

ইয়েমেন: সৌদি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের কারণ কী

সৌদি আরব ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। এ খবর দিয়েছেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আলে সৌদ।

রেডিও তেহরান জানিয়েছে, সৌদি আরব এক ‘শান্তি প্রস্তাব’ উত্থাপন করেছে যাতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের নজরদারিতে ইয়েমেন জুড়ে যুদ্ধবিরতি পালিত হবে এবং দেশটির বিমান ও সমুদ্রবন্দরগুলো খুলে দেয়া হবে। প্রস্তাবে সানা বিমানবন্দর খুলে দেয়ার পাশাপাশি জ্বালানী ও খাদ্য আমদানির জন্য হুদায়দা সমুদ্রবন্দর খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে ইয়েমেনিরা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ছয় বছর আগে ২৬ মার্চ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ও অসম যুদ্ধ শুরু করে। সৌদি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ইয়েমেনের হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে এখন দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু তারপরও রিয়াদ সরকার এখন পর্যন্ত ইয়েমেনিদেরকে নতজানু করতে পারেনি। এ অবস্থায় সৌদি আরব ছয় বছর পর কেন যুদ্ধবিরতি চাইছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রশ্নের উত্তরে দুটি কারণের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রথমত, সৌদি আরব তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র অর্থাৎ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে অত্যন্ত চাপের মধ্যে আছে। কারণ পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে শক্ত সমর্থন ছাড়া সৌদি আরবের পক্ষে কোনো যুদ্ধই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর দ্বিতীয়ত, ছয় বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে সৌদি সরকার এটা বুঝতে পেরেছে যে, ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয়ী হওয়া সহজ কাজ হবে না। তা ছাড়া ইয়েমেনিরা এতো দিন ধরে হামলার শিকার হলেও এখন তারা সৌদি আরবের রিয়াদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পাল্টা হামলা চালানো শুরু করেছে। ফলে সৌদি আরবের যুদ্ধের ব্যয়ভার অনেক বেড়ে গেছে।

ইরানের সংসদ স্পিকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা আমির আব্দুল্লাহিয়ান ইয়েমেন যুদ্ধে সপ্তম বছর পদার্পণ উপলক্ষে বলেছেন, ইয়েমেনের যোদ্ধারা ছয় বছর ধরে সৌদি-মার্কিন আগ্রাসন মোকাবেলা করে এসেছে। তিনি বলেন, তৎকালীন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের দাবি করেছিলেন, মাত্র ১৫দিনে তারা হুথিদের প্রতিরোধকে নির্মূল করে দেবেন। কিন্তু আজ হুথিরাই বিজয়ী এবং সৌদি ও তার সমর্থকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সৌদি আরব যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছে তাতে তারা কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় ইয়েমেনিরা পাল্টা হামলা শুরু করায় বর্তমানে সৌদি আরব খুব আতঙ্কের মধ্যে আছে। তাই মুখে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও তারা খুব একটা আন্তরিক নয়। কারণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়ার পরপরই সৌদি জঙ্গিবিমান রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তাই কেন তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিল সেটাই প্রশ্ন। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে সৌদি সরকার আসলে তাদের ওপর যে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে সেটাকে আনসারুল্লাহদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। আমরা চাই সব পক্ষ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে জাতিসংঘের তত্বাবধানে শান্তি আলোচনা শুরু করুক।

তবে ইয়েমেনের ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকার সৌদি ধোঁকাবাজির বিষয়ে অবহিত। তারা জানিয়েছে ইয়েমেনের ভূমি দখল ও আগ্রাসন অব্যাহত রাখা থেকে বোঝা যায় সৌদি আরব যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে তা লোক দেখানো মাত্রা।

আরো সংবাদ