স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বোয়ালখালী,চকরিয়া ও টেকনাফে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় সহিংসতা, সন্দ্বীপে ফাঁকা গুলি

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলি ও সংঘাতে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায়। আহত হয়েছেন আরও ৩০জন। তাদের মধ্যে ১৮ জন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভোট গ্রহণ চলাকালে সন্দ্বীপেও ফাঁকা গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে চকরিয়া বোয়ালখালী ও টেকনাফে।
মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম (৩২)। উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে সকাল সাড়ে ৯টায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান।। নিহত ব্যক্তি কুতুবজোমের পশ্চিম পাড়া গ্রামের ছোট মিয়ার পুত্র।
এলাকাবাসী জানান, কুতুবজোম ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কুতুবজোম জামেউস সুন্নাহ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট শেখ কামালের কর্মী-সমর্থকদের সাথে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে । এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল কালাম মারা যান। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে আরো ৪ জন আহত হয়েছেন। গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পরস্পরকে দায়ী করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশাররফ হোসেন খোকন দাবি করেছেন নিহত ব্যক্তি তার সমর্থক। এ সময় সাময়িকভাবে দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়। সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাই। উল্লেখ্য মহেশখালীর একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউপিতে গতকাল ভোট গ্রহণ হয়। কুতুবজোম ইউনিয়ন ছাড়া পৌরসভা ও বাকি দুই ইউপিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। অপরদিকে কুতুবদিয়া উপজেলায় বড়ঘোপ ইউপি নির্বাচনে ৭ নং ওয়ার্ডে পিলট কাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নৌকার এজেন্ট স্থানীয় গোলদার পাড়ার মৃত মোঃ হোছাইন এর পুত্র আব্দুল হালিম (৩৫) নিহত হন। তিনি ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে জানা গেছে। এছাড়া ঘোড়া প্রতীকের এজেন্ট আজম কলোনীর নুরুচ্ছাফার পুত্র আবু শামা বাচ্চু (৩৬) সহ ৩০ জন আহত হন।জানা যায়, মেয়র পদে ভোট গ্রহণ না হলেও তেমন কোন অঘটন ছাড়াই মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে বোয়ালখালী পৌরসভা কাউন্সিলর পদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরণের সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়াই কঙবাজারের চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে শতভাগ সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে সকাল আটটার আগে থেকে ১৮টি কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে নারী-পুরুষ ভোটারের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। দীর্ঘদিন পর সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ভোটারেরা।
সকাল থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত ভ্যাপসা গরমের মধ্যে ভোটারেরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর পর মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এর পরও ভোটারেরা ভোট দিতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সময় ভোটারেরা অভিযোগ করেছেন, বুথে বুথে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে মারাত্মক শ্লথ গতি ছিল। এ কারণে অনেক বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়েছে ভোটারদের। এর পরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে তারা খুশি।
এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘কোন ধরণের সংঘাত-সংঘর্ষ বা রক্তপাত ছাড়াই পুরো পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রের ১৩৯টি বুথে ইভিএম পদ্ধতিতে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ নির্বাচনে মেয়র পদে চার প্রার্থী, তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ১৪ জন ও ৯টি সাধারণ ওয়ার্ডের ৪৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীসহ সর্বমোট ৬৭জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করেন।বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে সন্দ্বীীপে ১২ টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল ৮ টা থেকে বৃষ্টি আর কাদামাটি মারিয়ে ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। পুরুষ ভোটারদের তুলনায় মহিলা ভোটারদের লাইন ছিল তুলনামূলক বড়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা গুলি আর ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজে কমতে থাকে ভোটার উপস্থিতি। দুপুর বারটার পর প্রায় কেন্দ্র ভোটার শূন্য হয়ে পরে। দুপুর দুইটায় সন্তোষপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল করিম জাল ভোট প্রদান ও ৮০০ জলদস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে সাংবাদিকদের ভোট বর্জনের কথা জানান।

আরো সংবাদ