স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বিমানের কার্গো গুদামে বাইরের লোকের আনাগোনা, বাড়ছে পণ্যের ঝুঁকি

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রয়েছে আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স। যেটাকে বলা হয়ে থাকে কার্গো গুদাম। যেখানে আমদানি পণ্য সংরক্ষণ করা থাকে। কিন্তু এই কার্গো গুদামে বেড়েছে অননুমোদিত ব্যক্তির আনাগোনা। এমনকি অন্যের পণ্য সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। ফলে চোরাচালানের শঙ্কা ও পণ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিমানের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের জেনারেল ম্যানেজারের (কার্গো) দৃষ্টি আকর্ষণ করে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার। সেই চিঠিতে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।

ঢাকা কাস্টম হাউজ ও চিঠি সূত্রে জানা গেছে, আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স একটি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা গুদাম। এটি বাংলাদেশ বিমানের আওতাধীন। যার কাস্টোডিয়ান বিমান। এই গুদামে কাস্টম, বিমানের অনুমোদিত কর্মকর্তা, লোডার এবং স্টেকহোল্ডার ছাড়া প্রবেশের অনুমতি নেই। কিন্তু আমদানি কার্গো গুদামে সম্প্রতি বেড়েছে অননুমোদিত ব্যক্তির প্রবেশ। ফলে বাড়ছে পণ্যের ঝুঁকি।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমানের কার্গো শাখার মাধ্যমে আমদানি-রফতানিকৃত পণ্যের গুদাম ব্যবস্থার নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় করা উচিত। সাম্প্রতিক দেখা গেছে, আমদানি কার্গো ভিলেজে অননুমোদিত ব্যক্তির আসা-যাওয়া অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এতে আমদানি পণ্যের কায়িক শুল্কায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। পাশাপাশি মিথ্যা ঘোষণাকৃত পণ্যের অবস্থান সম্পর্কে অসৎ আমদানিকারক বা তার প্রতিনিধি জেনে যাচ্ছে। এতে রাজস্ব ফাঁকির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। বিমানবন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যচালান, আন্তর্জাতিক যাত্রীর সঙ্গে আনা ব্যাগেজগুলোয় যেকোনো ধরণের পণ্যচালান, যেকোনো ব্যক্তি ও যানবাহনের পরীক্ষণ ও তল্লাশি কার্যক্রম কেবল যথোপযুক্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে গৃহীত হতে পারে। একই আইনের ধারা ২ (বি) অনুসারে উল্লিখিত আইন দ্বারা বা আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কাস্টম কর্মকর্তা হচ্ছেন যথপোযুক্ত কর্মকর্তা।

কাস্টমস আইনের ১৬৩ ধারায় কর্মকর্তাদের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অধিকার এবং ওয়ারেন্ট ছাড়াই যেকোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি ও আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাবলিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজে অননুমোদিত ব্যক্তি বা ব্যক্তি শ্রেণির কাস্টম সংশ্লিষ্ট কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপরোধে এবং তাদের অননুমোদিত যাতায়াতে বিধিনিষেধসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, কাস্টমস আইন অনুযায়ী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়মিত কাস্টম হাউজকে অবহিত ও অনুমোদন নেওয়া বাঞ্ছনীয়। আমদানি পণ্য সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানে গাফিলতি জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজস্বের জন্য হুমকি। ওয়্যারহাউজের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিধান হচ্ছে কিনা, তা পরিবীক্ষণ করা লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা কাস্টম হাউজের ওপর বর্তায়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ওয়্যারহাউজে কাস্টম হাউজ অনুমোদিত শুধু কাস্টমস কর্মকর্তা, ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট সদস্য, ওয়্যারহাউজ কিপারের অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশ ছাড়া অন্যদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা বাঞ্ছনীয়। এছাড়া বিশেষ কারণে ওয়্যারহাউজে কারও সাময়িক যাতায়াতের অনুমোদন কেবল বিমান ও কাস্টম হাউজের আলোচনা সাপেক্ষে হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ বিষয়টি নিশ্চিত করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ওপর বর্তায়। ফলে কার্গো শাখার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কহীন ব্যক্তির বিমানবন্দরের প্রচলিত সিকিউরিটি পাস দিয়ে ওয়্যারহাউজের গোডাউনে যথেচ্ছা যাতায়াত বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বিধিমালা ও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন আইনের লঙ্ঘন এবং কাস্টম পণ্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

এছাড়া ওয়্যারহাউজ বা গুদামে অননুমোদিত ব্যক্তির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি প্রস্তাব করা হয়েছে কাস্টম হাউজের পক্ষ থেকে। প্রস্তাবগুলো হলো- আমদানি কার্গোর প্রবেশপথে ঢাকা কাস্টম হাউজের অনুমোদনে কার্গো নিরাপত্তা ইউনিটের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা। বিমানবন্দরে প্রচলিত সিকিউরিটি কার্ডের ভিত্তিতে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তির কাস্টমস বন্ডেড গোডাউনে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে ঢাকা কাস্টম হাউজ ও বিমানের কার্গো শাখা থেকে ইস্যু করা সার্ভিস আইডি কার্ড বা এজেন্ট কার্ডের ভিত্তিতে প্রবেশের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে ভিজিটর পাশের ব্যবস্থা চালু করে সাময়িক যাতায়াত পদ্ধতি শুরু করা যেতে পারে। বিমানের কার্গো শাখা ও কাস্টম হাউজের ফ্রেইট শাখার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টহল টিম গঠন করে অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তির যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং করা। কার্গো শাখায় ডিজিটাল বায়োমেট্রিক এক্সেল কন্ট্রোল পদ্ধতি চালু করা। এছাড়া বিমানের বন্ডেড ওয়্যারহাউজের বাইরে এয়ারসাইডে গমনের ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এভিয়েশন সিকিউরিটি তার নিরাপত্তা নীতির আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমের যুগ্ম-কমিশনার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘সম্প্রতি অননুমোদিত ব্যক্তির আনাগোনা গুদাম এলাকায় বেড়েছে। আর এটা বন্ধে সম্প্রতি নীতি পদ্ধতি শাখা থেকে বিমানকে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে। গুদাম একটি বন্ডেড এলাকা। আর এখানে বন্ডেড পাস থাকা ব্যক্তিরাই ঢুকতে পারবেন। যেকোনো ব্যক্তি বা এজেন্সির লোক এখানে যেতে পারবে না। যেকোনো ব্যক্তি যেন বন্ডেড এলাকায় যেতে না পারে সেজন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরো সংবাদ