স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তালিকায় উন্নীত হতে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

এই সুখবরটি বাঙালী জাতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের উত্তরণের ঘটনাকে ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, এই অর্জনের কৃতিত্ব বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের এবং এই সাফল্যকে নতুন প্রজন্মের প্রতি উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে গণভবন থেকে যুক্ত হন তিনি।এসময় তার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক যুগ আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।উন্নয়নশীল দেশের মর্যদা লাভ করায় বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি বলেন, মহামারির কারণে প্রায় এক বছর পর আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । তবুও সরাসরি না, ভার্চুয়ালি । আজ অবশ্য আমি আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি, একটি মহৎ এবং গৌরবোজ্জ্বল প্রত্যয়নের সুসংবাদ দেয়ার জন্য। বাংলাদেশ গতকাল স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।

তিনি আরও বলেন, সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে। এসময় বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংস স্তুপের মধ্যে থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামরা জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইয়ে অনাস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে। যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।

উল্লেখ্য, গত ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এলডিসি স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওসকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের সুপারিশ করা হয়।

পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সূচক পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে সব ধরনের সূচকের অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৮২৭ মার্কিন ডলার। তবে কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে জাতিসংঘের মান অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার হতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে।

অন্যদিকে, মানবসম্পদ সূচকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজন ৬৬ পয়েন্ট। আর বাংলাদেশের রয়েছে ৭৫ দশমিক ৩ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। এসব অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

নিয়ম অনুযায়ী, তিন শর্ত পূরণ হলে এবং পরপর দুটি পর্যালোচনায় এ মানদণ্ড ধরে রাখতে পারলে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করে ইউএন-সিডিপি। তার মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে তিনটি শর্তই পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ এবং এ মান ধরে রেখেছে।

তিনটি শর্ত হলো- মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার, মনবসম্পদ সূচকে ৬৬ পয়েন্ট ও অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা নিচে আসতে হয়। বাংলাদেশ এসব শর্ত ২০১৮ থেকেই পূরণ করে আসছে।

২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার, মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭৫.৩ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ২৫.২। এই সুপারিশ পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য তিন থেকে পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পাঁচ বছরের প্রস্তুতির সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

আরো সংবাদ