স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

‘রেমিটেন্স যোদ্ধাদের খবর কে রাখে’

প্রতিক্ষণে প্রবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ আসছে। দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কয়েকদিন পরই ওমান ও ইতালিসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

২০২০ সালের মতো এবারও গত কয়েকদিনে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। অনেকে দেশে এসে আটকে পড়েছেন। আবার অনেকে ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে কাজ হারিয়ে দিশেহারা।

দেশের জিডিপির ১০ শতাংশ আসে রেমিট্যান্স আয় থেকে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে মিশে আছে প্রবাসীদের শ্রম-ঘাম আর অশ্রু।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বজুড়ে লকডাউন এবং অচলাবস্থার কারণে বহুমাত্রিক সংকটে পড়েছেন শ্রম যোদ্ধারা। বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেতন পাচ্ছেন না। আবার অনেকে ছাঁটাই এবং মজুরি হ্রাসের কবলে পড়েছেন। বিশ্বের ১৬৯টি দেশে বাংলাদেশের এক কোটি ত্রিশ লাখেরও বেশি প্রবাসী কাজ করেন।

কয়েকটি দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের ঈদে চাকরি হারানো প্রবাসীদের অনেকেই এখন বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। দুবাই প্রবাসী আব্দুল্লাহ  মিয়া জানান, প্রায় তিন মাস ধরে তিনি বেকার। আগে একটি কোম্পানিতে কাজ করতেন। মালিক একদিন এসে জানান, ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। তাই তাকে অন্যত্র চাকরি দেখতে বলেন।  এরপর থেকে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন আব্দুল্লাহ। ছেলেমেয়েদের জন্য বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেননি। স্ত্রী তাকে ফোন করে বলেছেন, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

কুয়েতে কর্মরত আলাউদ্দিন জানান, গত কয়েক মাস ধরে তিনি দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না। অনেকদিন ধরে বেতনভাতাও দিচ্ছে না মালিক। কারণ তিনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সেটির ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। সৌদি প্রবাসী রুবেল বলেন, আমার পরিবার গ্রামে থাকে। টাকার জন্য মা ফোন দেন। তিনি ধার করে করে সংসার চালাতে বলেছেন। রুবেল বলেন, গত বছর ঈদে কাউকে কিছু কিনে দিতে পারিনি, এ বছর আরও বড় সমস্যায় আছি। সৌদি আরবে আর কয়দিন থাকতে পারব, তার কোনো নিশ্চয়তা নাই।

কথা হচ্ছিল কোরিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমানের সঙ্গে, তিনি জানান, গত বছর কোরিয়া থেকে এসেছেন, এখনও দেশে কিছু করতে পারছেন না। জমানো টাকা খরচ করে সংসার চলছে, এভাবে জমানো টাকা খরচ করলে বেশিদিন টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। কোরিয়া প্রবাসী জহিরুল জানান, কোরিয়া থেকে এসে ১৪ মাস ধরে আটকে আছে, যা টাকা ছিল সব খরচ করে হয়ে গেছে। অনেক ধার-দেনাও করেছেন। চরম অস্থিরতায় তার দিন কাটছে।

ইউরোপের দেশেও মহামারির প্রভাব চরমে। কিছুদিন আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জার্মান প্রবাসী জানান,  দেশটিতে তিনি রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করেন। তার দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চলমান লকডাউনে ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। বছরখানেক ধরে অনেক লোকসান হচ্ছে।

দুবাই থেকে ব্যবসায়ী হাসান জানান, তিনি অনেক লোককে চেনেন যারা অর্ধেক বেতনে চাকরি করছেন। অনেকেই চাকরি হারিয়ে চরম সংকটে আছেন। মোহাম্মদ নুরে আলম নামে একজন জর্ডান প্রবাসী বলেন, জর্ডানে আমার কোম্পানি চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। করোনাকালের প্রথমদিকে মনে করেছিলাম কর্মী ছাঁটাই করতে হবে। কিন্তু জর্ডান সরকারের সহযোগিতার কারণে তা করতে হয়নি। বরং গত মাসে আরো দেড়শজন নিয়োগ দিয়েছি। অন্যদিকে, বাংলাদেশে আমার গার্মেন্টসে পঁচিশ শতাংশ শ্রমিক ছাঁটাই করতে হয়েছে। বাংলাদেশে আগের মত অর্ডার নেই। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিমাসে লোকসান হচ্ছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে সংকটে পড়া প্রবাসীদের রক্ষা করতে খাত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। রেমিটেন্স খাতকে না বাঁচালে জিডিপি কমে যাবে।

আরো সংবাদ