স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

আলুর দামও ৫০ টাকা !

কয়েক মাস ধরে সরবরাহ সংকটে পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রবি মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক বৃষ্টিতে ফলন নষ্ট হওয়ায় সবজির বাজারও চড়া। এর মধ্যে আলুর দামও বেড়ে গেছে অস্বাভাবিক। গত তিনদিনের ব্যবধানে নিত্যসবজি পণ্য আলুর দাম কেজিপ্রতি ৮ টাকা বেড়ে ৪৪ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে খুচরায় ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। নতুন মৌসুমের আলু বাজারে আসতে বিলম্ব হলে দাম আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের সবজির সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে গতকাল প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ৪৪ টাকায়, যা শুক্রবারও ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তারও দুই দিন আগে একই মানের আলু বিক্রি হয়েছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকায়।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুর মজুদ কমে আসায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা দাম বাড়িয়ে সরবরাহ করছেন। কোল্ডস্টোরেজ থেকে চাহিদা অনুযায়ী আলুর সরবরাহ হলেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সবজির পাইকারি আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক আলু প্রবেশ করত রিয়াজউদ্দিন বাজারে। এছাড়া পাহাড়তলী, কর্নেলহাট, ইপিজেড, কাজিরহাট, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে গড়ে ৫০-৬০ ট্রাক আলু প্রবেশ করত। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন আলু উৎপাদন ও মজুদকারী জেলাগুলো থেকে সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়। চলতি মৌসুমে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়েছে অনেক জেলায়। পাশাপাশি আগাম জাতের রবিশস্যের আবাদ নষ্ট হওয়ায় দেশের বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামও অস্বাভাবিক পরিমাণ বেড়েছে। এ কারণে আলুর চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

আড়তদাররা জানিয়েছেন, উৎপাদন মৌসুমের শেষ দিকে মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, রংপুরের বিভিন্ন আড়তে আলু মজুদ করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর রবি বা শীত মৌসুম শেষ হয়ে গেলে সারা দেশের পাইকারি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু সরবরাহ করেন ব্যাপারীরা। গত বছর যে পরিমাণ আলু মজুদ হয়েছিল চাহিদা তার চেয়ে বেড়ে গেছে এবার। মূলত অন্যান্য সবজির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে চাহিদার চাপ বেড়েছে আলুর ওপর। তাছাড়া উত্তরবঙ্গের বন্যার কারণে এবার আলুর ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে, যার কারণে বেড়েই চলেছে পণ্যটির দাম।

জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মেসার্স কুমিল্লা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুল মান্নান  বলেন, ঘূর্ণিঝড়সহ বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর আলুর ফলন দেরিতে আসছে। দুই সপ্তাহ আগেই নতুন মৌসুমের আলু আসার কথা থাকলেও এখনো আসেনি। এ কারণে কোল্ডস্টোরেজ থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। পুরোদমে নতুন মৌসুমের আলু না আসা পর্যন্ত আলুর দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

চট্টগ্রামে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেই আলু আসে সবচেয়ে বেশি। সরবরাহ কমায় শুধু মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাট থেকে আলু আসছে। তবে পূর্ণ মৌসুমে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, রাজশাহী থেকেও আলু সরবরাহ ছিল। যানবাহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর উৎপাদন ভালো হলেও ব্যাপারী পর্যায়ে দূরের জেলা থেকে চট্টগ্রামে আলু সরবরাহে ব্যাপারী ও কৃষকদের অনীহা ছিল। ফলে মজুদ মৌসুমে চট্টগ্রামের বাজারে আলু না পাঠিয়ে কোল্ডস্টোরেজের দিকেই ঝুঁকছেন ওই সব অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।

ব্যাপারী ও আড়তদাররা বলেন, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী থেকে প্রতি ট্রাক আলু আনতে বর্তমানে ২৮ হাজার টাকা ভাড়া গুনতে হয়। এছাড়া আড়ত কমিশন ও শ্রমিক মজুরি খরচসহ প্রতি কেজি আলুতে প্রায় ২ থেকে ২ টাকা ২৫ পয়সা খরচ হয়। এতে অনেক ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের আলু পাঠানোর চেয়ে কোল্ডস্টোরেজ কিংবা দেশের অন্যান্য জেলার বিক্রির প্রতি ঝুঁকছেন বলেও জানান চট্টগ্রামের বৃহৎ এ কাঁচাপণ্যের বাজারের ব্যবসায়ীরা।

রিয়াজউদ্দিন আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাইনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, মৌসুমে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আলু সরবরাহ হতো। মজুদ কমে যাওয়ায় বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ, জয়পুরহাট থেকেই আলু আসছে। দেশের অধিকাংশ মোকামের আলু শেষ হয়ে যাওয়ায় মুষ্টিমেয় কয়েকটি এলাকা থেকে সরবরাহকারীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বর্তমান মজুদে আরো কয়েক সপ্তাহ চলবে। এ কারণে আগামীতে আলুর দাম আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরো সংবাদ