স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে স্বাক্ষর অভিযানের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেশ ও বিদেশের সকল বাংলাদেশীকে স্বাক্ষর অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত লাখ লাখ বা এক কোটি স্বাক্ষর আনতে পারি… আমরা সেই সব দেশের (যেখানে খুনিরা এখন বসবাস করছেন) তাদের (খুনিদের) ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ বাড়াতে পারব।

জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু নিয়ে জনতার প্রত্যাশা আয়োজিত এক আলোচনায় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান এম এ করিম।

বঙ্গবন্ধু খুনের সাজাপ্রাপ্ত দুই হত্যাকারী রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরী যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারী হিসেবে শনাক্ত। অন্য তিন পলাতক খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম এবং মোসলেহউদ্দিন খানের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি।

দুই খুনির অবস্থান জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় তাদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডিয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিব বর্ষের’ মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমপক্ষে রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, তিনি (রাশেদ চৌধুরী) মার্কিন কর্তৃপক্ষকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন এবং এখন সেখানে তার অভিবাসন মামলা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

নূর চৌধুরী সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডার আদালতে বাংলাদেশ একটি মামলা দায়ের করেছে এবং তা জিতেছে। কিন্তু এখনো নূর কানাডার কিছু আইনি ভিত্তি দেখাচ্ছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, কানাডায় বসবাসকারী প্রবাসীসহ বাংলাদেশীদের স্বাক্ষর প্রচারণা নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

তিনি কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কানাডা খুনিদের কেন্দ্র হতে পারে না। একজন খুনি কানাডায় মুক্ত থাকতে পারে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার জন্য বাকি তিনজন পলাতক খুনিকে শনাক্ত ও প্রেরণ করতে ঢাকা বিশ্বের সব দেশের সহযোগিতা চেয়েছে।

মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খুনিদের খোঁজে বিদেশের সকল বাংলাদেশ মিশনকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র, আইন এবং স্বরাষ্ট্র তিন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন দেশে ও বিদেশে আমাদের জনগণের সহায়তা দরকার। তিনি বঙ্গবন্ধুর অপর তিন পলাতক হত্যাকারীদের চিহ্নিত এবং ফিরিয়ে আনতে সরকার যাতে সমর্থ হয়, তাই বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের পাশাপাশি বাংলাদেশী প্রবাসীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

মোমেন বলেন, আমি আমাদের প্রবাসী ভাই এবং দেশবাসীকে তাদের (পলাতক খুনি) সম্পর্কে তথ্য দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আমরা আমাদের কলঙ্ক মুছে ফেলতে পারি।

তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের তাদের নিজ নিজ দেশে চিহ্নিত পলাতক খুনিদের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানান, যাতে ওই এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারে একজন খুনি তাদের পাশে রয়েছে।

মোমেন বলেন, দেশে ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে চাই।

এদিকে গত এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পলাতক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদকে গ্রেফতারের পর কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মাজেদ প্রায় আড়াই দশক ধরে বিচার এড়াতে পলাতক ছিলেন।

মোমেন বলেন, তিনি (মাজেদ) গত ২৩ বছর ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে ছিলেন এবং এ বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, এটি একটি সন্তুষ্টির বিষয় যে আমরা ইতোমধ্যে এই মুজিব বর্ষে পলাতক খুনিদের মধ্যে অন্যতম মাজেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যার জন্য বারোজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তাদের মধ্যে বরখাস্ত হওয়া পাঁচ সেনা সদস্য- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, মহিউদ্দিন আহমেদ ও বজলুল হুদা -২০১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি দেয়া হয় এবং অপর দন্ডপ্রাপ্ত কর্নেল রাশেদ পাশা জিম্বাবুয়ে পলাতক অবস্থায় মারা যায় ফারুক রহমান, শাহরিয়ার রশিদ খান, আর্টিলারি মহিউদ্দিন আহমেদ বিচারিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হন, অপরদিকে হুদা থাইল্যান্ড থেকে বিতাড়িত হয়েছিল এবং তৎকালীন জেলা জজ গোলাম রসুল রায় দেয়ার পরে মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনা হয়েছিল।

আরো সংবাদ