স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

জলবায়ু পরিবর্তন : ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে বাড়তি অর্থ প্রদানের আহ্বান শেখ হাসিনার

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য বাড়তি অর্থ ও প্রযুক্তির সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জি-২০ দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী থেকে উত্তরণে প্রতিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

২৮ সেপ্টেম্বর ফাইনানশিয়াল টাইমসে প্রকাশিত শেখ হাসিনার নিবন্ধটি পাঠকদের জন্য অনূদিত আকারে তুলে ধরা হল।

বাংলাদেশের জন্য পানি হল জীবন-মরণ সমস্যা।

আমার দেশ হল বড় বড় নদী, বিস্তৃত উপকূল ও বিপর্যয় মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম মানুষের দেশ। কিন্তু ২০২০ সাল আমাদের অভূতপূর্ব পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মে মাসে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পান পথে রেখে গেছে ধংস চিহ্ন এবং তারপর মৌসুমি বৃষ্টি দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে পানিবন্দি করে ফেলে। এই দুর্যোগে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়; ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।

পানি যখন আপনার বাড়িতে ঢুকে পড়ে, আপনার জিনিসপত্র নষ্ট করে, নামার সময় দূষণ আর রোগ ছড়িয়ে যায়, সেই পরিস্থিতি খুব কঠিন। আর তা দ্বিগুণ কঠিন হয়ে পড়ে যখন একই বছরে কোভিড-১৯ এর মত মহামারী দেখা দেয়। স্যানিটেশন ও মহামারী প্রতিরোধে অপরিহার্য পরিষ্কার পানি পাওয়াই কঠিন হয়ে যায়।

ঢাকায় বসে যখন আমি লিখছি, তখন ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা অববাহিকার পানি নেমে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের শঙ্কার মধ্যেও আমার দেশের জনগণ তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছে।

বন্যা থেকে বাঁচতে আর কী করা যায়, তা আমরা মূল্যায়ন করে দেখছি। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। ভবিষ্যতে যাতে আমরা আরও প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে পারি, সে পরিকল্পনাও করা হচ্ছে বরাবরের মতোই। কারণ বাংলাদেশে আমাদের সব সময়ই ‘পরের বারের’ কথা ভাবতে হয়; জলবায়ু সঙ্কট বিরাম দেয় না।

যেসব দেশ নিজেদের জলবায়ু সঙ্কট থেকে সুরক্ষিত মনে করে, যেসব ব্যাংকার আর অর্থদাতারা মনে করেন যে তারা বিপদ এড়িয়ে যেতে পারবেন, তাদের আমি সতর্ক করে বলতে চাই: আপনারা তা পারবেন না। কোনো দেশ বা ব্যবসা যে একলা টিকতে পারে না, তা এই কোভিড-১৯ দেখিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক সঙ্কট আমরা কেবল ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মধ্য দিয়েই মোকাবেলা করতে পারি। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ যে সহজ, তা এর মধ্যেই আমাদের সামনে প্রতিভাত হয়েছে। ২০২০ সাল এমন এক বছরে পরিণত হয়েছে, যখন বিজ্ঞানীদের কথায় কান না দিয়ে আমাদের আর উপায় নেই।

পুরো গ্রহজুড়ে এক জরুরি পরিস্থিতি এখন চলছে; জলবায়ু, স্বাস্থ্য ও প্রকৃতির ত্রিমুখী সঙ্কটের মুখোমুখি আমরা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বাড়ছে, সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলছে।

আরো সংবাদ