স্বাধীনদেশ টেলিভিশন

দুবাইয়ের সমান গরম ঢাকার মিরপুরে

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাতের এক দোকানি পাশের বিক্রেতাকে বলছিলেন, গরমে ঘুমাইতে পারি নাই। বেচাকেনাও নাই। কী যে করি!

মতিঝিল থেকে সাভারগামী ওয়েলকাম পরিবহনের এক চালকও রাতে ঘুমাতে না পারার কথা বলছিলেন তার সহকারীকে। বলছিলেন, তার মাথা ব্যাথা করছে।

তীব্র গরমে উষ্ঠাগত প্রাণ অপেক্ষায় বৃষ্টির। ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে বলে দুঃসংবাদও রাজধানীর মানুষের কাছে কিছুটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। সাগরে ঝড় হলে বৃষ্টি হবে, তাতে কমবে গরম, এমন কথাও বলাবলি হচ্ছিল।

রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় এক রিকশাচালকের শার্ট একেবারে ভেজা দেখা গেল। দেখলে মনে হবে, বুঝি পানি ঢেলেছেন।

তবে সেই রিকশাচালক বললেন, ‘কী করুম! যে গরম। ঘামে এই অবস্থা।’

গত এক সপ্তাহ ধরে আবহাওয়া এ রকম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা ৪০ না ছুঁলেও এখন গরমের অনুভূতি আরবের চেয়ে বেশি।

আরবের শহরগুলোতে তাপমাত্রা আর গরমের অনুভূতির মধ্যে তেমন পার্থক্য থাকে না। সেখানে তাপমাত্রা আর গরমের অনুভূতি ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি।

বেলা তিনটার দিকে ঢাকার মিরপুর ও বাড্ডা এলাকায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও গরমের অনুভূতি ছিল ৪৫ ডিগ্রি। মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শহরগুলোরে মধ্যে দুবাইয়ের গরমের সঙ্গে এর তুলনা করা যায়।

আরব আমিরাতের প্রধান শহরটিতে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি আর তা অনুভূত হচ্ছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মরুর দেশ সৌদি আরবেও এত গরম নেই। দেশটির প্রধান শহর রিয়াদে সোমবার গরমের অনুভূতি দেখা গেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি।

স্বস্তি মিলবে সহসা

তখন সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এই গরম থেকে সোমবারই স্বস্তি মিলতে পারে জানিয়ে অধিদপ্তর বলছে, লঘুচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ইয়াসের প্রভাবে দাবদাহের প্রভাব কমতে শুরু করবে।

রোববার দুপুর ১২টার দিকে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও আজ তা কমে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছে। তা আরও কমতে থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গুগলের পূর্বাভাস দেখা যায়, ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও অনুভূত হচ্ছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সৌদি আরবের রাজধানী জেদ্দায় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনুভূত হচ্ছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আজ বিকাল থেকেই তাপমাত্রা কমে যাবে। আগামী তিন দিন এটি কমে স্বাভাবিক হতে পারে। কাল থেকে আজকের তাপমাত্রা কম আছে।

‘সাধারণত দুপুরে তাপমাত্রা একটু বেড়ে যায়। আমরা বিকাল তিনটার পর সারা দেশে তাপমাত্রা জানাতে পারব।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে বলা হয়েছে, রোববার খুলনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশে সর্বনিম্ন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে।

আরিফ বলেন, ‘গতকাল কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আজ এর চেয়ে বেশি হবে। তাপমাত্রা এর আশেপাশেই থাকবে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। কাল আরও কমে যাবে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

অন্যদিকে বৃষ্টির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এর আগেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছিল, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে গরমের তীব্রতা বেশি থাকবে। প্রতি বছরই এমন দাবদাহ থাকে। যদিও মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল নগন্য। মে মাসে তা একটু বৃদ্ধি পায়।

পূর্বাভাসে বলা হয়, মে মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে তিন দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি অথবা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। দেশের অন্যত্র পাঁচ থেকে সাত দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা বৃষ্টিপাত হবে।

আরো সংবাদ